বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ২০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬

মূলপাতা নির্বাচন

সংঘর্ষ–সহিংসতায় শেষ হলো পৌরভোট



রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন
প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি ২০২১, ৫:০০ অপরাহ্ণ

সংঘর্ষ, গোলাগুলি, কেন্দ্র দখল, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও প্রার্থীর ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে তৃতীয় ধাপে ৬২ পৌরসভার ভোটগ্রহণ। তবে কোথাও কোথাও শান্তিপূর্ণ ও দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে ভোটারদের ভোট দিতেও দেখা গেছে। এ ছাড়া অনিয়মের অভিযোগ এনে ছয় পৌরসভায় মোট আটজন মেয়র পদপ্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বিএনপির প্রার্থীরা ছয়জন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী একজন এবং স্বতন্ত্র একজন রয়েছেন।

আজ শনিবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে একটানা ভোট গ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এসব পৌরসভায় ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হয়। এরপর কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রার্থীদের এজেন্টদের উপস্থিতিতে ভোট গণনা শুরু হয়। গণনা শেষে প্রাথমিক ফলাফল কেন্দ্রে কেন্দ্রেই ঘোষণা করা হবে। তারপর সেসব ফলাফল চলে আসবে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা সব কেন্দ্রে ফলাফলের ভিত্তিতে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করবেন।

শীতের সকালবেলায় সুষ্ঠুভাবে ভোট শুরু হলেও তখন ভোটারের উপস্থিতি তুলনামূলক ছিল কিছুটা কম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়তে থাকলে কোথাও কোথাও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে।

রামগঞ্জে তিনজন গুলিবিদ্ধ
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌরসভায় নির্বাচন ঘিরে সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম কাজিরখিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনের সড়কে বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ সময় পুলিশসহ আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কয়েকজন। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

হরিণাকুণ্ডুতে ব্যালট ছিনতাই, বাক্স ভাঙচুর

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু পৌরসভার মান্দারতলা কেন্দ্রে ঢুকে দুটি ব্যালট বক্স ভাঙচুর এবং বেশ কিছু ব্যালট নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কমপক্ষে পাঁচ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেছেন।

মণিরামপুরে হাতবোমা, নলছিটিতে কেন্দ্র দখলের অভিযোগ
যশোরের মণিরামপুর পৌরসভার ৯ নম্বর বিজয়রামপুর কেন্দ্রের অদূরে এক কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে। এ সময় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে কয়েকটি হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলেও অভিযোগ ওঠেছে।

ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল ওয়াহেদ খানের কর্মীদের সঙ্গে বহিরাগতরা কেন্দ্র দখল করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিটি বুথে মেয়র পদপ্রার্থীর ব্যালট রেখে ভোটারদের শুধু কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের ব্যালট দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

টাঙ্গাইলে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ
টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর পৌরসভার নির্বাচনে ভোট চলাকালে বেলা ১১টার দিকে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কক্ষসহ আরও তিনটি কক্ষ বন্ধ করে একযোগে কাউন্সিলর প্রার্থী আনোয়ার হোসনের পানির বোতল ও নৌকা প্রতীকে সিল মারার অভিযোগ উঠেছে। ভুঞাপুর পৌরসভার কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ঘটনায় আধা ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ।

ভোট বর্জন
কিশোরগঞ্জ সদর পৌরসভায় বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। এ ছাড়া জেলার কটিয়াদি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের একজন বিদ্রোহী প্রার্থীও ভোট বর্জন করেছেন। সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী আর ঝালকাঠির নলছিটিতে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীর পাশাপাশি একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও ভোট চলাকালে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী চুয়াডাঙ্গার দর্শনা এবং নাটোরের সিংড়া পৌরসভায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

তৃতীয় ধাপে ৩৭ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছেন। এর মধ্যে কুমিল্লার লাকসাম, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছেন। এছাড়া ৯ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে এবং ২৫ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেন।

৬৪ পৌরসভায় ভোটের তফসিল হলেও পাবনার সুজানগর পৌরসভার ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। আরও কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ভোট হয়নি না। ফলে আজ ভোট হয়েছে ৬২ পৌরসভায়। মেয়র পদের এক প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় ময়মনসিংহের ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি।

এ ধাপের নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। পাশাপাশি মেয়র পদে লড়েছেন বেশকিছু স্বতন্ত্র প্রার্থীও।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন তিন হাজার ৩৪৪ জন। এরমধ্যে মেয়র পদে ২২৯ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৫৫ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে দুই হাজার ৩৬০ জন।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর