মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৪ রবিউস সানি, ১৪৪৬

মূলপাতা চসিক নির্বাচন স্পেশাল

ভোটের দিন সিএমপি কার্যালয়ে ‘আটক’ ছিলেন আ’লীগ নেতা মাসুম


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৮ জানুয়ারি, ২০২১ ২:৩০ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের দিন (২৭ জানুয়ারি) ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম ৮ ঘন্টা ‘আটক’ ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কার্যালয়ে। লালখান বাজার ওয়ার্ডে নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের শঙ্কায় ভোটের দিন সকালে তাকে সিএমপি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। ভোটের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মাসুমকে আটক রাখা হয়। ভোট শেষ হওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

নির্বাচনে ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল হাসনাত মো. বেলাল। নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল হাসনাত বেলাল শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। এ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন সাবেক কাউন্সিলর এ এফ কবির আহমেদ মানিক।

দলীয় মহল থেকে জানা গেছে, আবুল হাসনাত বেলালের সাথে ‘সাপে-নেউলে’ সম্পর্ক দিদারুল আলম মাসুমের। মাসুম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। তিনি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। পরে তিনি বিদ্রোহী হিসেবে ভোটের মাঠে থাকলেও শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।

মাসুম ভোটের মাঠ ছেড়ে দিলেও বেলালের সাথে বিরোধের জেরে তিনি নির্বাচনে মানিকের পক্ষে অবস্থান নেন বলে দলীয় মহলে প্রচার ছিল।

ভোটের দিন ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলাল ও বিদ্রোহী প্রার্থী এ এফ কবির আহমেদ মানিকের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুই পক্ষের অন্তত ১৫ জন কর্মী আহত হন।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার খবর, ভোটের দিন ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে আবুল হাসনাত বেলাল ও দিদারুল আলম মাসুমের সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার আশঙ্কা ছিল। যে কারণে নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের আশঙ্কায় দিদারুল আলম মাসুমকে ভোটের মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। তিনি ভোটের মাঠে থাকলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতো।

এ বিষয়ে জানতে সিএমপি কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সিএমপির উত্তর জোনের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ভোটের দিন সিএমপি কার্যালয়ে ‘আটক’ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে দিদারুল আলম মাসুম বিষয়টি স্বীকার করে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমি এলাকায় থাকলে হয়তো কোনো ঝামেলা হতো-এমন আশঙ্কায় আমাকে ডেকে নেওয়া হয়েছে।’

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিপক্ষ হয়তো আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেছে। ও (আবুল হাসনাত বেলাল) তো একটা পাগল। তার অরাজনৈতিক চিন্তাভাবনার কারণে এটা হয়েছে। অথচ আমার সাথে দলের বিদ্রোহী ও বিএনপি প্রার্থীর কোনো সম্পর্ক নেই।’

আবুল হাসনাত বেলাল রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘উনি (দিদারুল আলম মাসুম) তো প্রার্থী ছিলেন না, আমি কেন উনাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করবো ? কাকের পিছনে ময়ূরের পেখম লাগালে কাক কখনো ময়ূর হয়না। উনি কোনো প্রার্থীর অনুগত বাহিনী হতে পারে। তার দ্বারা নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্ট হবে বলেই পুলিশ কমিশনার তাকে ডেকে নিয়ে বসিয়ে রেখেছিল।’

দিদারুল আলম মাসুমের ভোটের মাঠ থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টি ‘নাটক’ বলছেন লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এ এফ কবির আহমেদ মানিক। তিনি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘মাসুম আমার ঘনিষ্ট লোক হলে নির্বাচনে আমার পক্ষে কাজ করতো। যিনি (আবুল হাসনাত বেলাল) বিজয়ী হয়েছেন তার ঘনিষ্ট লোক তিনি। আমি নির্বাচনে হারার পেছনে কারণ সে (মাসুম)। সে যদি নৌকার পক্ষে ভোট চাইতো নৌকার জিততো। আর নৌকা জিতলে আমিও জিততাম।’

লালখান বাজার ওয়ার্ডে সব কেন্দ্রে নৌকার মেয়র প্রার্থী কি জিতেনি ?-এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘নৌকা জিতেছে কিন্তু জেতার মধ্যে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন আছে।’

উল্লেখ্য, এ এফ কবির আহমেদ মানিক গত বছরের ২২ জুলাই মাসুমের নামে বিশেষ বিবেচনায় বরাদ্দ থাকা দু’টি অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদনের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রামের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে মাসুমের অস্ত্র দু’টির লাইসেন্স বাতিলপূর্বক জব্দের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর গত ৩ আগস্ট দিদারুল আলম মাসুম নিজে খুলশী থানায় গিয়ে অস্ত্র দুটি জমা দেন।

ছাত্রজীবন থেকেই নানা ঘটনার কারণে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে আছেন দিদারুল আলম মাসুম। একটা সময় দৌর্দণ্ড প্রতাপে লালখান বাজারসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন মাসুম। তবে সারাদেশে তার নাম-পরিচয় ছড়িয়ে পড়ে ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল। সেদিন চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার এলাকায় হেফাজতে ইসলামের মিছিলে গুলি করেছিলেন তিনি। পরদিন মাসুমের অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করার একটি ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে আলোচনায় আসেন তিনি। কিন্তু এরপর থেকে লালখান বাজারে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নিজ দলের প্রতিপক্ষের সঙ্গে ক্রমাগত সংঘাতের ঘটনায় সমালোচিত হন মাসুম।

উল্লেখ্য, ভোটের আগে নির্বাচনী প্রচারণায় ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে উত্তাপ-উত্তেজনা বিরাজ করেছিল। নির্বাচনী বিরোধের জেরে গত ১৬ জানুয়ারি টাইগার পাস বটতল মোড় এলাকায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর গণসংযোগে আবুল হাসনাত বেলাল ও দিারুল আলম মাসুমের সমর্থেদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইট-পাথর নিক্ষেপে অন্তত ১০ জন আহত হয়।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর