রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন
প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি ২০২১, ৪:০৫ অপরাহ্ণ
ভোটের তিন দিন আগে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে চসিক নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে বার্তা দিয়েছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। তাদের কথায় আশ্বাস রেখে সিইসি দৃড় কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, চট্টগ্রামে ভালো ভোট হবে । কিন্তু আজ (২৭ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম সিটিতে কী দেখা গেলো ?
অধিকাংশ কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া দফায় দফায় সংঘর্ষ, গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন শতাধিক। ভোট শেষ হওয়ার আগে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী জান্নাতুল ইসলাম একটি কেন্দ্রে হামলার শিকার হয়ে নির্বাচন বর্জন করেছেন।
সহিংসতা, সংঘর্ষ আর আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো চট্টগ্রাম সিটির ভোট। এখন বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট গণনা শুরু হয়েছে। আসকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে।
ভোটের একদিন আগে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর বলেছিলেন, নির্বাচনে পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকবে। শুধু তাই নয়, তিনি হুংকার দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা ডানেও তাকাবো না, বামেও তাকাবো না; যেই আইনশৃঙ্খলার জন্য থ্রেট হয়ে দাঁড়াবে তাকে কঠোরভাবে দমন করবো’।
কিন্তু পুলিশের সামনেই কয়েকটি কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রিসাইডিং অফিসারও আহত হয়েছেন।
কোনো কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ-বিএনপি আবার কোনো কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিতে এক যুবক প্রাণ হারান। পুলিশের সামনেই এই সহিংস ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী মাহামুদুর রহমান। তিনি রাজনীতি সবোদকে বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতে প্রতিপক্ষের লোকজন আমার সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। পুলিশ ছিল অসহায়।
১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর নির্বাচনী বিরোধকে কেন্দ্র করে আপন ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে আরেক ভাই নিহত হন। নিহত নিজামউদ্দীন এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী সাবের আহম্মদের কর্মী বলে জানা গেছে। ঘাতক সালাউদ্দিন কামরুল আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আমিনের কর্মী।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, অধিকাংশ কেন্দ্রে তাদের এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি, আবার যেসব কেন্দ্রে এজেন্টরা ঢুকেছিল তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন অভিযোগ করেছেন, সব কেন্দ্র থেকে বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর বিভিন্ন কেন্দ্রে হামলা হয়েছে।
১৩ নম্বর সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনি তার এজেন্টদের একটা কেন্দ্রেও ঢুকতে না দেওয়া ও নিজের ভোট দিতে না পারার কারণে নির্বাচন বর্জন করেছেন।
৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডে একটি ভোটকেন্দ্রে আসাদগঞ্জ ছোবাহানীয়া আলীয়া মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে ২ জন আহত হয়েছে। একই ওয়ার্ডের পাথরঘাটা মহিলা কলেজ কেন্দ্রে হামলা ও ইভিএম ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মোহাম্মদ ইসমাইল বালীকে আটক করেছে পুলিশ।
অনেক ভোটার অভিযোগ করেছেন, তারা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেননি।
নগরীর কোনো কোনো ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘলাইন দেখা গেছে। তবে অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের কোনো লাইন দেখা যায়নি।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ ৬ দলের ৬ প্রার্থী ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। এরা হলেন-আওয়ামী লীগের (নৌকা) এম. রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপির (ধানের শীষ) ডা. শাহাদাত হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (হাতপাখা) মো. জান্নাতুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের (মোমবাতি) এম এ মতিন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের (চেয়ার) মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ এবং ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (আম) আবুল মনজুর।
সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে কাউন্সিলর পদে ভোট হয়েছে ৩৯টিতে। ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী পদে ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। কাউন্সিলর প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যুতে গত ২১ জানুয়ারি এই ওয়ার্ডে শুধুমাত্র কাউন্সিলর পদে ভোট স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে ভোটের আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হারুন উর রশিদ।
৩৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ছিল ১৬৮ জন। আর ১৪টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে প্রার্থী ছিল ৫৭ জন।