রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৫ জানুয়ারি, ২০২১ ৭:১৫ : অপরাহ্ণ
ব্যাট হাতে প্রথমে চ্যালেঞ্জিং স্কোর। বল হাতে শেষটাও ভালোমতোই রাঙালো বাংলাদেশ। সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতেও নূন্যতম লড়াই করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। চার সিনিয়র ক্রিকেটারের দারুণ ব্যাটিং আর মুস্তাফিজ-সাইফউদ্দিনদের বোলিং তোপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১২০ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে তামিম ইকবালের দল। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ১২২ ও ১৪৮ রান করে ৬ ও ৭ উইকেটে হারে উইন্ডিজ। তিন ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে ট্রফি জিতল স্বাগতিক শিবির। অনুমিতভাবে হোয়াইটওয়াশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ছয় উইকেটে ২৯৭ রান করে বাংলাদেশ। দলের হয়ে হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। জবাব দিতে নেমে ১৭৭ রানে গুটিয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বড় টার্গেটে খেলতে নেমে শুরু থেকেই ধুঁকেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বল হাতে সফরকারী শিবিরে বরাবরের মতো প্রথম আঘাত হানেন বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান। দলীয় ৩০ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে ফেরান এই কাটার মাস্টার।
মুস্তাফিজের পর আক্রমণে সফল স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। তার সঙ্গে দুরন্ত ছন্দে ছিলেন অনেকদিন পর দলে ফেরা অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন।
এদিন অবশ্য সাকিব আল হাসান নিজের পুরো বোলিং কোটা পূরুণ করতে পারেননি। কুচকিতে টান পড়ে মাঠের বাইরে চলে যান ৩০তম ওভারে। উইকেটের দেখা পাননি প্রায় পাচ ওভার করেও।
তিন উইকেট হারানোর পর কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে জেসন মোহাম্মেদকে ফিরিয়ে ওই প্রতিরোধ ভাঙেন সাইফউদ্দিন। ৩২ রানে ভাঙে এই জুটি। ৩৬ বলে ১৭ রান করে বিদায় নেন জেসন। ক্যারিবীয় অধিনায়কের পর বোনারকেও নিজের শিকার বানান সাইফউদ্দিন। মিরাজের পরের স্পেলে মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জামার হ্যামিল্টন। দ্রুত ছয় উইকেট হারানোর পর শেষ পর্যন্ত ১৭৭ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন চোট কাটিয়ে ফেরা সাইফউদ্দিন। মুস্তাফিজ ও মেহেদী হাসান মিরাজ নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। একটি করে নিয়েছেন সৌম্য সরকার ও তাসকিন আহমেদ।
এর আগে তামিমের ৪৯, সাকিবের ৪৮, মুশফিকের ৩৯ ও মাহমুদুল্লাহর ২২তম অর্ধশতকে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৯৮ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ।
প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে খুব একটা সাফল্য পাননি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। তবে চট্টগ্রামে খোলস ছেড়ে বের হয়ে এলেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা। দুই টপ অর্ডার ছাড়া রানের দেখা পেয়েছেন সবাই।
টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে নড়বড়ে। ওপেনার লিটন দাস এই ম্যাচেও ব্যর্থ। চার বলে কোনও রান না করেই ফিরে যান লিটন দাস। আলজারি জোসেফের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে মাঠ ছাড়েন ডান-হাতি ওপেনার।
সাকিবকে সরিয়ে ওয়ানডাউনে শান্তকে সুযোগ দিয়েছিলেন নির্বাচকরা। কিন্তু এ ম্যাচেও ব্যর্থ এই তরুণ। দলীয় ৩৮ রানে কাইল মায়েরের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে বিদায় নেন বাম-হাতি এই ব্যাটসম্যান। তার আগে ৩০ বল খেলে ২০ রান করেন তিনি।
উইকেটে থিতু হয়ে ৭০ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন অধিনায়ক তামিম।এর আগের ম্যাচেও হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন এই ওপেনার। ৮০ বলে ৬৪ রান করে জোসেফের দ্বিতীয় শিকর হন তামিম। তার ইনিংসে ছিল তিনটি বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা।
মাঠে নেমেই দ্রুত রান তোলায় মনোযোগ দেন মুশফিকুর রহিম। সাকিবের সঙ্গে ৪৮ রানের জুটি গড়েন।
সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রানে ফেরার আভাস দেন সাকিব। শেষ ওয়ানডেতেও ধরে রাখলেন সেই ধারাবাহিকতা। তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮তম হাফসেঞ্চুরি। কিন্তু উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস আর বড় করতে পারলেন না। ৫১ রান করে রেমন রেইফারের বলে বোল্ড হন সাকিব। ৮১ বলে তার ইনিংসটি সাজানো ছিল তিন বাউন্ডারি দিয়ে।
এরপর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জুটি বাঁধেন মুশফিকুর রহিম। ৪৭ বলে ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তিনি। মুশফিকের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহও খেলেন হাতখুলে। দুজনে মিলে গড়েন ৭২ রানের জুটি। এর মধ্য ৬৪ রানে বিদায় নেন মুশফিক। ৫৫ বলে তাঁর ইনিংসটি সাজানো ছিল চার বাউন্ডারি ও দুই ছক্কায়।
মুশফিক ফেরার পর সৌম্যকে নিয়ে এগিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। শেষ দিকে মাহমুদুল্লাহর-সৌম্য সরকার ৩১ রানের জুটি গড়েন। ৮ বলে ৭ রান করে রান আউট হন সৌম্য।
সৌম্য রান আউট হয়ে ফিরলে শেষ পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহর দারুণ ফিনিশিংয়ে ২৯৭ রানে থামে বাংলাদেশ। ৪৩ বলে ৬৪ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদুল্লাহ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে (তামিম ৬৪, লিটন ০, শান্ত ২০, সাকিব ৫১, মুশফিক ৬৪, মাহমুদউল্লাহ ৬৪*, সৌম্য ৭, সাইফউদ্দিন ৫* ; মেয়ার্স ৭-০-৩৪-১, জোসেফ ১০-০-৪৭-২, আকিল ১০-০-৪৬-০ , জেসন ৩-০-১৬-০, হার্ডিং ৯-০-৬৬-০, রেমন ১০-০-৬১-২)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৪৪.২ ওভারে ১৭৭/১০ (কিওর্ন ১, সুনীল ১৩, বোনের ৩১, জেসন ১৭, মেয়ার্স ১১, হ্যামিল্টন ৫, রেমন ২৭, আলজারি ১১, আকিল ০, হার্ডিং ১* ; মুস্তাফিজ ৬-০-২৪-২, তাসকিন ৮.২-১-৩২-১, মিরাজ ১০-২-১৮-২, সাকিব ৪.৫-০-১২-০, সাইফউদ্দিন ৯-০-৫১-৩, সৌম্য ৩.১-০-২২-১)।
ফল : বাংলাদেশ ১২০ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : মুশফিকুর রহিম।
ম্যান অব দ্য সিরিজ : সাকিব আল হাসান।