রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৫ জানুয়ারি, ২০২১ ৯:৩০ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি প্রার্থীরা হতাশ ও আতঙ্কিত হয়ে পড়লেও শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে থাকার কৌশল নিয়েছেন তারা। বিএনপি নেতারা বলছেন, ভোটের তিন দিন আগ থেকে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার লক্ষণ দেখছেন না তারা। ৫০ শতাংশ সুষ্ঠু ভোট হলেও বিএনপির মেয়র ও অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী বিজয়ী হবেন বলে তাদের আত্মবিশ্বাস।
দলীয় মহল থেকে জানা গেছে, ২০১৫ সালের চসিক নির্বাচনের মতো এবার ভোটের মাঠ ছেড়ে দিতে নারাজ বিএনপি নেতৃবৃন্দ। এবার ভোটের দিন ২০১৫ সালের নির্বাচনের মতো পরিস্থিতি হবে না এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে এবার ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ বেকায়দায় পড়বে বলে মনে করছেন তারা। বিএনপি এই সুযোগটা কাজে লাগাতে এবার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকার কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে চসিক নির্বাচনে ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ‘কেন্দ্র দখল ও হামলার’ অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছিলো বিএনপি। ওই নির্বাচনে আ জ ম নাছির হাতি প্রতীকে পেয়েছিলেন চার লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট। আর কমলালেবু প্রতীকে বিএনপি প্রার্থী মনজুর আলম পেয়েছিলেন তিন লাখ চার হাজার ৮৩৭ ভোট।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন সোমবার (২৫ জানুয়ারি) নাসিমন ভবন দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ভোটের দিন মাঠ ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, ১৯ জানুয়ারি থেকে নগরীর বিভিন্ন থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা করা হয়েছে। এতে ৬৯ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভোট নিয়ে জনমনে আতঙ্কের কারণে কেন্দ্রে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি হবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত বিএনপি নেতারা। তারা ভোটের অঙ্ক কষে মনে করছেন, ৫০ শতাংশ সুষ্ঠু ভোট হলেও বিএনপির মেয়র ও অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী বাজিমাত করবেন। কিন্তু বিএনপি নেতারা ভোটের মাঠের পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে ৫০ শতাংশও সুষ্ঠু ভোট হবে বলে মনে করছেন না।
বিএনপির চসিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে বুঝাই যাচ্ছে, এটা একটা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হবে। যারা ইলেকশন করার দায়িত্বে তারাই বাধাগ্রস্ত করছে। তারা চায় না, জনগণ কেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক।’
গত ১৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে চসিক নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সমন্বয় সভায় আমীর খসরু বলেছিলেন, ২০১০ সালের চসিক নির্বাচনে আমরা পরিষ্কার একটা নীলনকশা করেছিলাম; আমাদের দলীয় প্রার্থী শক্তিশালী না হলেও আমরা আওয়ামী লীগকে পরাজিত করেছিলাম।
এবার নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নীলনকশা কী? জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু বলেন, ‘২০১০ সালের চসিক নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছিল বিধায় আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। কিন্তু এখন তো ইলেকশন হচ্ছে না। এটাকে ইলেকশন বলা যায় না। তবে আমরা যেহেতু রাজনীতি করি, মাঠে তো থাকতে হবে।’
দলীয় মহল থেকে জানা গেছে, গত তিন দিন ধরে নগরীর বিভিন্ন থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার নিয়ে দলীয় প্রার্থীরা হতাশ ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তবে এরপরও বিএনপি নেতারা ভোটের দিন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আশা জিইয়ে রাখতে চাইছেন।
চসিক নির্বাচনে বিএনপির প্রধান এজেন্ট আবুল হাশেম বক্কর রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমরা ভোটের একটা অঙ্ক কষে দেখেছি, অন্তত ৫০ শতাংশ সুষ্ঠু ভোট হলেও আমাদের মেয়র প্রার্থী ও অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী বিজয়ী হবেন। কিন্তু ভোটের তিন দিন আগ থেকে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে তাতে এই অঙ্কের হিসাব সহজে মেলানো যাবে না।’
দলীয় মহল থেকে জানা গেছে, বিএনপি নেতাদের মধ্যে পোলিং এজেন্ট নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টরা প্রবেশ করে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত বিএনপি প্রার্থীরা। তবে এখনো পর্যন্ত বিএনপি প্রার্থীদের কোনো পোলিং এজেন্ট গ্রেফতার হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি দলটির চসিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব ইদ্রিস আলী।
দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, ভোটের প্রচারণা শুরুর আগে নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে দলীয় মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করেন নগর বিএনপি নেতৃবৃন্দ। ওই বৈঠকে বিএনপি নেতৃবৃন্দ কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোটের দিন যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকতে নির্দেশনা দেন।
৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের বিএনপি কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুস সাত্তার সেলিম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকতে মহানগর বিএনপি থেকে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবো।’
৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডের বিএনপি কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আজম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘এবার আমরা ভোটের মাঠ ছাড়বো না। যত কিছুই হোক না কেন আমরা এবার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভোটে লড়াই করবো।’