রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৪ জানুয়ারি, ২০২১ ১০:১৫ : পূর্বাহ্ণ
সরকার পতনের দাবিতে উত্তাল রাশিয়ার মস্কোসহ অন্তত ৬০টি শহর। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক বিরোধীদলীয় নেতা কারাবন্দি অ্যালেক্সি নাভালনির মুক্তির দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন তার সমর্থকরা। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানী মস্কোসহ ৯০টির মতো স্থানে এ সমাবেশ হয়েছে। এ বিক্ষোভ দমনে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয় দাঙ্গা পুলিশ। এ সময় নাভালনির তিন হাজারেরও বেশি সমর্থককে আটক করেছে পুলিশ।
শুধু মস্কো থেকেই আটক করা হয় ৭ শতাধিক। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন নাভালনির মুখপাত্র, একজন আইনজীবীসহ, বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। এ ছাড়া নাভালনির স্ত্রী উলিয়াকে আটকের কয়েক ঘণ্টা পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
মস্কোতে দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে, এমনও দেখা গেছে। এদিন বহু শহরে মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। এই কনকনে শীতের মাঝেই নেতার মুক্তি দাবিতে রাস্তায় নামেন সমর্থকেরা। এতেই বোঝা যায়, রাশিয়ার রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কতটা প্রভাবিত করতে পেরেছেন অ্যালেক্সেই নাভালনি।
ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট পুতিনের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত নাভালনি। রাশিয়ায় বিষ দিয়ে হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে পাঁচ মাস জার্মানিতে থাকার পর আকাশপথে গত রোববার (১৭ জানুয়ারি) দেশের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেপ্তার হন অ্যালেক্সেই নাভালনি। প্যারোলে হাজিরা দিতে ব্যর্থ হওয়ার একটি মামলায় তাকে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠান মস্কোর একটি আদালত। এরপর নাভালনি বিক্ষোভের ডাক দেন।
মস্কো, সেইন্ট পিটার্সবার্গ, সাইবেরিয়াসহ প্রায় ১০০ শহরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে মানুষ। কিশোর ছাত্র ছাত্রী থেকে শুরু করে বয়স্ক ব্যক্তিরা পর্যন্ত বিক্ষোভে অংশ নেয়। বিক্ষোভকারীরা মি. নাভালনির মুক্তি দাবি করে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের ধারণা অনুযায়ী, মস্কোর র্যালিতে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ অংশ নেয়। তবে রাশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা ৪ হাজার।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন রাশিয়ায় এই মাত্রার বিক্ষোভ আগে কখনো দেখা যায়নি আর মস্কোতে গত দশ বছরের মধ্যে এত বড় পরিসরে বিক্ষোভ হয়নি।
মস্কোর পুশকিন স্কয়ারে গতকাল শনিবার অন্তত ১৫ হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। এ ছাড়া রাশিয়ার আরো অনেক শহরে বিক্ষোভে নামে মানুষ। এ সময় পুলিশ হামলা চালায়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এরপরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
একজন বলেন, ‘ভয় পাওয়ার আর সময় নেই। যত বাধাই আসুক না কেন, আমরা সবাই এক হয়ে এর মোকাবিলা করব। এই চোর, দুর্নীতিবাজ সরকারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতেই হবে।’
আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমি শুধু নাভালনির মুক্তির জন্য না, আমার পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখানে এসেছি। বর্তমান সরকার নিজ স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। তাদের নেতৃত্বে দেশের কোনো উন্নয়ন সম্ভব না।’
এদিকে, দেশজুড়ে যে কোনো বেআইনি সমাবেশ ও উসকানি তাৎক্ষণিকভাবে দমনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে দেশটির পুলিশ বাহিনী।
রুশ বিরোধী নাভালনির ধারণা ছিল, দেশে ফিরলে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। ফলে নিজের ফ্লাইটে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বহু সাংবাদিককে সঙ্গে নেন তিনি। বিমানবন্দরেও অভ্যর্থনা জানাতে হাজির হন তাঁর সমর্থকেরা। এসবেও শেষ রক্ষা হয়নি। তার বিমানের গতিপথ ঘুরিয়ে অন্য বিমানবন্দরে নিয়ে তাঁকে আটক করে মস্কোর পুলিশ।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা, এপি