রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৩ জানুয়ারি, ২০২১ ৫:০০ : অপরাহ্ণ
চায়ের দোকানে রাজনীতির আলাপ- এ তো আবহমান বাংলার ঐতিহ্যেরই অংশ। আর সময়টা যদি হয় শীতকাল তাহলে তো কথাই নেই। চায়ের কাপে ধোঁয়া ওঠার সাথে সাথে জমে ওঠে রাজনীতির আলাপও। তার উপর যোগ হয়েছে নির্বাচনের মওসুম। চা-ও গরম, রাজনীতিও গরম- দুইয়ে মিলে শীত দূরীকরণের যেন এক মহৌষধ!
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনকে সামনে রেখে নগরজুড়ে চায়ের কাপে বইছে নির্বাচনী ঝড়। চলছে ভোটের উৎসবমুখর প্রচারণা। গণসংযোগ, মিছিল, মাইকিং, শোডাউনসহ ভোটারদের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে নানান প্রতীকের প্রার্থীরা। দিচ্ছেন আধুনিক ও সময়োপযোগী প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনী পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে নগরীর অলি গলি ও রাজপথ। সর্বত্র আলোচনা শুধু চসিক নির্বাচন নিয়ে। নগরীর প্রত্যেক মোড়ে আলাপ, চায়ের দোকানেও বইছে নির্বাচনী ঝড়। চাকরীজীবি, ব্যবসায়ী, রিকশা চালক, আগন্তুক, দিন মজুরসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ যারাই চায়ের দোকানে বসছে তাদের মধ্যে বেশিরভাই নির্বাচনী আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। বিভিন্ন প্রার্থীর প্রশংসা, উন্নয়নের নানা দিক তুলে ধরাসহ চলছে সমালোচনাও।
ভোটারদের মন এখন ভোটের দিকে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাও শেষ পর্যায়ে। আর মাত্র তিন দিন পরেই নির্বাচন। শীতের আমেজে ধূমায়িত চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে চলছে ভোট নিয়ে আলোচনা। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত জমে উঠছে ভোটের আড্ডা।
শুধু চায়ের দোকান নয়, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, গণপরিবহন সব জায়গায় চলছে ভোটের হিসাব-নিকাশ।
কেমন হবে সিটি করেপারেশন নির্বাচন? কে হবেন নগরপিতা ? নগরীর কয়টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ আর কয়টি ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী জিতবে? এই প্রার্থীর দোষগুলো কি? ওই প্রার্থীর গুণ কি-এসব বিষয় নিয়ে ফুটপাতের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে হোটেল-রেস্টুরেন্ট, গণপরিবহন সব জায়গায় চলছে নানা চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী অফিসে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের নির্বাচনী আলাপ-আলোচনায় দিন কাটে।
এছাড়া শ্রমজীবী মানুষ ও ছাত্রনেতাদের মধ্যে ভোটের আলাপে আগ্রহ বেশি দেখা যায়। চা পান করতে করতে অনেকেই নির্দ্বিধায় কোনো এক প্রার্থীর পক্ষে নিজের অবস্থান প্রকাশ করছেন। তবে মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকেই তার রাজনৈতিক অবস্থান কৌশলগত কারণে প্রকাশ করেন না। সে কারণে ভোটের আলাপ থেকে দূরে থাকারও চেষ্টা করেন কেউ কেউ। তবে ভোটের দিন এখন যতই এগিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে ভোটের আলাপ।
আবার কোথাও কোথাও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ভোটের আলাপ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক ঠেকাতে অনেক চায়ের দোকানে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে নোটিশও। সেখানে লেখা-‘রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ।’ নগরীর পাঠানটুলীতে একটি চায়ের দোকানে দেখা গেছে এমন নোটিশ। নোটিশ টাঙানোর কারণ সম্পর্কে দোকানি বাবুল হক বলেন, কয়েকদিন আগে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে, গুলিতে ১ জন মারা গেছে। তাই বাধ্য হয়েই তিনি এ নোটিশ টাঙিয়েছেন।
শনিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেল চারটার দিকে নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার ফুটপাতের একটি টঙের দোকানে ভোটের আড্ডায় মশগুল ৪-৬ যুবক। চসিক নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে নানা হিসাব কষছেন তারা। ওই যুবকরা যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। চায়ের দোকানি সাজ্জাদ হােসেন ব্যস্ত চা বানাতে।
সাজ্জাদ হােসেন বললেন, দোকানে যত লোক আসেন সবাই দেখি ইলেকশন নিয়েই আলাপ করেন। এখন ইলেকশন ছাড়া অন্য কোনো সাবজেক্ট নিয়ে কাস্টমাররা আলাপ করে না। এই ফাঁকে চা বিক্রিও অনেক বেড়ে গেছে। ভোটের আলাপ করতে করতে অনেকে দুই-তিনবার পর্যন্ত চা পান করে। এই শীতের মধ্যে রাত ১২টা পর্যন্তও চা বিক্রি চলে।
নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের লড়াই দেখার অপেক্ষায় নগরবাসী। কেমন হবে ভোটযুদ্ধ, শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি কে হাসবেন?-এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে নগরবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত।