চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী জানিয়েছেন, তিনি নগরবাসীকে স্বপ্ন দেখাতে চান না। নগরবাসীর সেবা দিতে পারাটাই আসল যোগ্যতা উল্লেখ করে নির্বাচনী ইশতেহারে ৩৭টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।
‘রূপসী চট্টগ্রাম আমার আপনার অহংকার, অঙ্গীকার-সবার যোগে সাজবে নগর’ এই শ্লোগানে ইশতেহারে রেজাউল করিম চৌধুরী নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন, যানজট নিরসন, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, নালা-খাল-নদী থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ মোট ৩৭টি প্রতিশ্রুতি দেন।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে একটি সেবামূলক ও কল্যাণ-জনমুখী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাব। আমার পূর্বসুরী সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী যে উচ্চতায় চট্টগ্রাম নগরীকে উন্নীত করেছিলেন তা পুনরুদ্ধার করে চলমান রাখবো এবং তাঁর আমলে প্রতিষ্ঠিত আয়বর্ধক প্রকল্পগুলো পুনরায় চালু করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে স্বনির্ভর ও আত্মনির্ভর করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো।
ইশতেহারে তিনি বলেন, নগরীর দখলকৃত খাল, নালা-নদী পুনরুদ্ধার ও পানি নিষ্কাশন উপযোগী করতে ১০০ দিনের মধ্যে সব ত্রুটি ও প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা নির্মূলে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে।
গৃহকর নিয়ে বিতর্ক এড়াতে রেজাউল ডিজিটাল গৃহশুমারির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেভাবে যৌক্তিক হারে গৃহকর নির্ধারণ করা হবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সব কার্যক্রমকে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেজাউল ইশতেহারে বলেন, রাজস্বসহ সব সেবা খাতে পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি করে সব সেবাকে ওয়ানস্টপ ডিজিটাল সার্ভারের আওতায় আনা, সমন্বয় করে নগরীর সব উন্নয়ন ও সেবাখাতকে এক ছাতার নিচে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
নগরীতে রাত ১০টার পর মাইকের ব্যবহার বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রেজাউল। যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের সঙ্গে বসে যত দ্রুতসম্ভব তা দূর করার দিকে মনযোগ দেবেন বলে জানান তিনি। এছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম ও নিরাপদ পথচারী পারাপারে আন্ডারপাস চালু করার উদ্যোগ নিবেন বলে জানান রেজাউল।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম প্রকৃতির এক অনন্য উপহার। ঘন সবুজের দেয়াল ঘেরা পাহাড়-নদী-হ্রদ ঝিলের সমন্বয়ে প্রকৃতি নিজের হাতে সাজিয়েছে চট্টগ্রামে বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক বন্দর চট্টগ্রাম। দক্ষিণ এশিয়ার প্রবেশদ্বার এই বন্দর। জাতীয় আমদানী-রফতানির ৮৫ শতাংশ চট্টগ্রাম দিয়ে পরিচালিত হয়। স্বাভাবিক কারণে চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা।
রেজাউল করিম বলেন, আমরা পরম সৌভাগ্যবান হয়েও প্রকৃতির চমৎকার উপহার চট্টগ্রামকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারছি না। এর জন্য শুধু দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ নয়, চট্টগ্রামের নাগরিক হিসেবে সকলেই সমান দায়ী। কারণ আমাদের মধ্যে নাগরিক দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আমি নিজেও এই দায় এড়াতে পারি না। আপনাদের সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় অতীতের সকল ভুল বিচ্যুতি পরিহার করে চট্টগ্রামকে সর্বাধুনিক বাসোপযোগী বিশ্বমানের উন্নত ও নান্দনিক নগর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য শিক্ষাবিদ অনুপম সেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, উত্তর জেলা কমিটির সভাপতি এম এ সালাম, নগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রমুখ।