রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন
প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি ২০২১, ৬:২৫ অপরাহ্ণ
নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ও বসুরহাট পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র আবদুল কাদের মির্জা মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছেন। নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে আজ (২২ জানুয়ারি) দুই আওয়ামী লীগ নেতার সমর্থকরা পাল্টাপাল্টি মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।
‘আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাজাকার পরিবারের লোক’ – নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর এমন মন্তব্যের প্রতিবাদে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় কাদের মির্জার সমর্থক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। এসময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা একরামুল করিম চৌধুরীর কুশপুত্তলিকাও দাহ করেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেন, নোয়াখালীর সংসদ সদস্য, মাতাল একরামুল করিম চৌধুরী আমাদের প্রিয় নেতা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, জননেতা ওবায়দুল কাদের সাহেবকে রাজাকারের পরিবারের সদস্য বলায় আজকে পুরো কোম্পানীগঞ্জ উত্তাল। আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, যদি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, যদি তাকে দল থেকে বহিষ্কার না করা হয়, যদি নোয়াখালীর অপরাজনীতি বন্ধ করা না হয়, যদি প্রশাসনে তার খবরদারি বন্ধ না করা হয়, তাহলে আমাদের আন্দোলন চলবে।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, অনেক দিন অপেক্ষা করেছি। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশে বসুরহাট বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল থেকে আমাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছি। আমরা কি বিচার পেয়েছি?
নোয়াখালীর এমপি একরামুল করিম চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার ও নোয়াখালী জেলা কমিটি বিলুপ্তি এবং নোয়াখালীর অপরাজনীতি অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত বসুরহাটের বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘটের ডাক দেন আবদুল কাদের মির্জা।
প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বসুরহাট বাজারের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
অপরদিকে কয়েকদিন ধরে মেয়র আবদুল কাদের মির্জার দেয়া বক্তব্যের প্রতিবাদে শুক্রবার সাড়ে ১১টায় জেলা শহর মাইজদীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে একরামুল করিম চৌধুরীর সমর্থক যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বিগত কয়েকদিন থেকে আব্দুল কাদের মির্জা নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান শামছুউদ্দিন জেহানকে নিয়ে মিথ্যা বানোয়াট ও অশ্লীল বক্তব্য দিয়ে আসছে। মির্জা কাদেরের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে তারা কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেন।
প্রধান সড়কে মিছিল শেষে পৌর বাজারের সামনে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পৌর যুবলীগ নেতা ইমাম হোসেন রাসেল, কাজী ইয়াছিন, জেলা যুবলীগের নেতা হামিদুর রহমান হিমেল ও ইয়াছিন আলম রকিসহ নেতাকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) ১১টা ৩২মিনিটে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি কথা বললে তো আর মির্জা কাদেরের বিরুদ্ধে বলবো না, আমি কথা বলবো ওবায়দুল কাদেরকে। একটা রাজাকার পরিবারের লোক এ পর্যায়ে আসছে, তার ভাইকে শাসন করতে পারে না। নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা না হলে, এগুলো নিয়ে আমি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আন্দোলন শুরু করবো।’
কিছুক্ষণের মধ্যে ভিডিওটি ফেসবুক থেকে সরিয়ে নেন তিনি। তবে এর আগেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
পরবর্তীতে শুক্রবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে একই আইডি থেকে লাইভে এসে একরাম বলেন, ‘আমি কালকের কথাগুলো ওবায়দুল কাদেরকে বলিনি। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমি মির্জা কাদেরকে বলেছি, কারণ তার পরিবার মুক্তিযোদ্ধা বিরোধী।’
এসময় নিজ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে একরাম বলেন, গত ১৮ বছর আমি কষ্ট করে নোয়াখালী আওয়ামী লীগকে এ পর্যায়ে এনেছি। কিন্তু মির্জা আমার গালে জুতা মেরেছে। ওবায়দুল কাদেরকে ভালোবাসলে আপনারা আজ কোন মিছিল, মিটিং ও বিক্ষোভ করবেন না।
প্রসঙ্গত, ১৬ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা টেন্ডারবাজি, অপরাজনীতি, মাদক, দূর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ এনে সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীসহ নিজ দলের একাধিক সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় নেতার সমালোচনা করে আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন।