আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, সাহস করে সত্য কথা বলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পছন্দ করেন। আমি নোয়াখালী-ফেনীর অপরাজনীতি, অন্যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে কথা বলেছি, তা নিয়ে নেত্রীর কাছ থেকে আমার ওপর কোনো চাপ নেই। কিছু কিছু নেতা এলোমেলো কথা বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা করছেন।
আজ (১৩ জানুয়ারি) বুধবার সকালে বসুরহাট পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চরপার্বতী এলাকায় কর্মী সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আগামী ১৬ জানুয়ারি বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে ভোটারদের লাঠি হাতে কেন্দ্রের আশপাশে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মেয়র প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা বলেন, কেউ ভোট কারচুপি কিংবা অনিয়ম করলে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পা ভেঙে দেবেন, বাকিটা আমি দেখব। ভোটের দিন লাঠির পাশাপাশি পুরনো জুতা নিয়ে যাবেন। পুরনো জুতা দিয়ে পেটালে ইজ্জত যাবে। কেন্দ্রে কোনো ভোটারকে আসতে বাধা দিলেই তাকে জুতা ও লাঠি দিয়ে পেটাবেন।’
সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে তথাকথিত আওয়ামী লীগ নেতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একরাম নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার বিএনপির সাবেক মেয়র হারুনুর রশিদ আজাদের মাধ্যমে আমার প্রতিপক্ষ বিএনপির মেয়র প্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরীকে দুদিন আগে ৫০ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন। ভোটের দিন তাদের নেতা-কর্মীরা মারামারি করে ভোট বানচালের পায়তারা করবে। টাকা খেয়ে আমার ভোটে রঙ লাগানোর জন্য তৎপর একরাম চক্র।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এই সহ-সভাপতি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় এখনও বলছি- ১৬ জানুয়ারির নির্বাচন নিরপেক্ষ হতে হবে। নিরপেক্ষভাবে আমি যদি এক ভোটও পাই তবে আমি বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়ে নেতা-কর্মীদের নিয়ে চা-মিষ্টি খেয়ে বাড়ি চলে যাব। কিন্তু কোনোপ্রকার অনিয়মের নির্বাচন হতে দেব না।’
আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘আওয়ামী লীগে অপরাজনীতি বন্ধ করে দলকে সুসংগঠিত ও সংশোধন করে সুষ্ঠু রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার জন্যই এসব কথা বলেছি। না হয় আগামী নির্বাচনে দলকে বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে। আমি যখন নোয়াখালী-ফেনীর আওয়ামী লীগের দুই নেতার অন্যায়, অনিয়ম, পুলিশ সদস্যদের চাকরি দিয়ে পাঁচ লাখ করে ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি দিয়ে টাকা নেওয়া, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা বলি তখন আমাকে বলা হয় পাগল। আপনারাই বলেন- আমি কি পাগল?’
তিনি একরাম চৌধুরীকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘চাকরি দিয়ে লোকজনের কাছ থেকে টাকা নেওয়া বন্ধ করেন।’
ফেনীর নিজাম হাজারীকে চোরাচালানকারী আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এমন অপকর্ম নেই যে, তারা দুজন করেন না। এসব নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’
এক নারী ভোটারের উদ্ধৃতি দিয়ে মির্জা কাদের বলেন, ‘গতকাল বিকালে গণসংযোগ করতে এক বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে এক নারী ভোটার আমাকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন- আপনি এখানে কেন এসেছেন? জবাবে আমি বললাম- ভোট চাইতে এসেছি। ওই নারী বললেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মাসেতু তৈরি করে দিয়েছেন। যতোদিন জীবিত আছি নৌকায় ভোট দেব। এতেই বুঝা যায় শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কতো বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তারেক জিয়া বিশ্বচোর। শেখ হাসিনা সাহসী নেত্রী। খালেদা জিয়া ঘরে ঢুকে গেছেন। জামায়াতে ইসলামী আরও ৫০ বছর অন্য দলের কোলবালিশ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এ দেশে মানুষের ভোট, ভাত, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও বাসস্থানের অধিকার একমাত্র শেখ হাসিনাই দিতে পারবেন। তার নেতৃত্বে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং ভোটাধিকার বাস্তবায়নের নির্বাচন হবে।’
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ডা. মাহবুবুল, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল গাফফার নিপু, ওমর ফারুক, নারী কাউন্সিলর প্রার্থী মাকসুদা আক্তার হ্যাপি, মো. লিটন ও বাহার উদ্দিন প্রমুখ।