রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন
প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি ২০২১, ৫:১২ অপরাহ্ণ
চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া এলাকা বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। বাকলিয়ায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) তিনটি ওয়ার্ড রয়েছে। এর একটি হলো ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড। বিস্ময়কর বিষয় হলো, এই ওয়ার্ডে চসিক নির্বাচনে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। দুজন প্রার্থীকে বিএনপি মনোনয়ন দিলেও তারা প্রতিপক্ষের সাথে গোপন আঁতাত করে সরে দাঁড়িয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর প্রার্থী হারুন উর রশিদ।
দলীয় সূত্রের খবর, ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে বিএনপি দুজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়। প্রথমে মনোনয়ন দেওয়া হয় ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিনকে। বিএনপি তাকে মনোনয়ন দিলেও তিনি নির্বাচন কমিশন থেকে রহস্যজনক কারণে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। তবে মহিউদ্দিন অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন না বলে নগর বিএনপি নেতৃবৃন্দকে জানিয়ে দেন। এরপর গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি নগর বিএনপি এ ওয়ার্ডে আজিজুল হক মাসুম নামের এক যুবদল নেতাকে মনোনয়ন দেয়। তিনি নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়ে ভোটের মাঠে প্রচারণাও করেন। কিন্তু আজিজুল হক মাসুমও শেষ পর্যন্ত মহিউদ্দিনের পথ ধরেন! হঠাৎ ভোটের মাঠ থেকে হাত-পা গুটিয়ে ফেলে শেষ দিন মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে বসেন।
১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে বিএনপির দুই কাউন্সিলর প্রার্থী ভোটের মাঠ ছেড়ে দেওয়াতে আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াকওভার পেয়ে যান!
২০১৫ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর প্রার্থী হারুন উর রশিদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন দুজন-মোহাম্মদ তৈয়ব (নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক) ও মো. মহিউদ্দিন (ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক)।
জানতে চাইলে ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘দল থেকে আমাকে প্রথমে মনোনয়ন দিয়েছিল। কিন্তু আমার হঠাৎ হার্টের সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তার বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেয়। তাই নির্বাচন কমিশন থেকে আর মনোনয়ন ফরম নিইনি।’
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাহার করা আজিজুল হক মাসুমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাই এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী ও কয়েকজন সমর্থকদের সাথে কথা হয় রাজনীতি সংবাদের। বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বলেছেন, প্রতিপক্ষের সাথে গোপন আঁতাত করে বিএনপির দুজন কাউন্সিলর প্রার্থী নানা অজুহাত দেখিয়ে ভোটের মাঠ ছেড়ে দিয়েছেন।
১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবদুল্লাহ আল ছগির রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘মহিউদ্দিন দলের মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র নেননি। আজিজুল হক মাসুম তার অসুস্থ মায়ের দেখভালের কথা বলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষের সাথে গোপন আঁতাত হয়েছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। হলেও সেটা আমার জানার কথা নয়। আর এটা বিএনপির ঘাঁটি হলেও দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা আপনারা তো জানেন।’
১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন তার সাথে প্রতিপক্ষের কোনো গোপন আঁতাত হয়নি দাবি করে তিনি তীর ছুঁড়লেন আজিজুল হক মাসুমের দিকে। রাজনীতি সংবাদকে তিনি বলেন, ‘মাসুমের সাথেই প্রতিপক্ষের গোপন আঁতাত হয়েছে। তাই তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।’
স্থানীয় আবদুল হামিদ নামের একজন বিএনপি সমর্থক বলছিলেন, ‘বাকলিয়াকে বিএনপির ভোট ব্যাংক বলা হয়। অথচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির ঘাঁটিতে দলীয় প্রার্থী দিতে পারেনি। এটা বিএনপির জন্য লজ্জার বিষয়।’
পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশ্ন রাখেন, বিএনপি অধ্যুষিত এলাকায় যেখানে বিএনপি কাউন্সিলর প্রার্থী ভোটের আগেই মাঠ ছেড়ে দিয়েছে, সেখানে নির্বাচনের সময় অন্য ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থীরা কীভাবে লড়াই করবে?
মনোনয়ন প্রত্যাহার করা দুই নেতার বিরুদ্ধে নগর বিএনপি সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয় বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা নানা প্রশ্ন তুলছেন।
এ বিষয়ে জানতে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।
বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর প্রার্থী হারুন উর রশিদ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থী তো অনেক আগেই ভোটের মাঠ ছেড়ে দিয়েছেন।’
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষের সাথে কী কারণে গোপন আঁতাত হবে? এটা আমার জানা নেই।’