রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ৪:১২ : অপরাহ্ণ
গত ২৯ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী দারুল উলূম মাদ্রাসার সাবেক প্রধান পরিচালক মরহুম আল্লামা শাহ আহমদ শফির কার্যালয় থেকে এক ভিডিও বার্তায় তার বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন আহমদ শফি আল মাদানী বলেছিলেন, তার বাবার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। তার এই ভিডিও বার্তা ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল। তিন মাস পর এখন তিনি সুর পাল্টে দাবি করলেন, মানসিক নির্যাতনের কারণেই তার বাবা আহমদ শফির মৃত্যু হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাওলানা ইউসুফ গত ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী দারুল উলূম মাদ্রাসার ঘটনা তুলে ধরে বলেন-‘শাহ আহমদ শফির রুমের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল, এসি-ফ্যানসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছিল। চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটানো হয়েছিল, মুখের অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলা হয়েছিল। হাসপাতালে যেতে বিলম্ব ঘটানো হয়েছিল। এই বয়োবৃদ্ধ আলেমের নাতির গলায় ভাঙা কাচ ধরে বলা হয়েছিল-‘এই বুইড়া, স্বাক্ষর কর, না হয় তোর নাতিকে হত্যা করবো’। এ কথা বলে জোর জবরদস্তিমূলক স্বাক্ষর নিয়ে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল।’ -এসব কিছুর পরও কি বলতে হবে, আল্লামা শফির মৃত্যু স্বাভাবিক হয়েছে?-এই প্রশ্ন রাখেন তিনি।
মাওলানা ইউসুফ অভিযোগ করে বলেন, আহমদ শফির মৃত্যুর আগের তিন দিন হাটহাজারীতে নারকীয় তাণ্ডব ও ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে। তার অফিস রুম ও হাটহাজারী মাদরাসার অনেক শিক্ষকের রুম ভাঙচুরের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুনিয়াবাসী দেখেছে। জীবনের শেষ মুহূর্তে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করতে দেয়া হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে চার দফা দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে-বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে আহমদ শফির মৃত্যুরহস্য উদঘাটন এবং জড়িতদের শাস্তি, তার পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলা তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করা, আহমদ শফির পরিবারের সদস্য ও তার অনুসারীদের নিরাপত্তা বিধান এবং আহমদ শফির রেখে যাওয়া অঙ্গনগুলো থেকে বিরোধীদের অপসারণ করা।
মাওলানা ইউসুফ বিন আহমদ শফি আল মাদানী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার শরফভাটা ইউনিয়নের পাখিয়ার টিলা কওমি মাদ্রাসার পরিচালক।
সংবাদ সম্মেলনে আহমদ শফির আরেক ছেলে আনাস মাদানী, আহমদ শফিকে হত্যার অভিযোগে করা মামলার বাদী ও আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন এবং হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
আহমদ শফির ছেলে আনাস মাদানীকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষা পরিচালক পদ থেকে অব্যাহতিসহ ছয় দফা দাবিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্ররা। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে মাদ্রাসাটির প্রধান পরিচালকের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন আহমদ শফি। একই সঙ্গে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসার শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় শুরা কমিটি। এরপর অসুস্থ আহমদ শফিকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
আহমদ শফির মৃত্যুর পর ঢাকা ও চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতের সাবেক কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেছিলেন যে আহমদ শফিকে হত্যা করা হয়েছে। অভিযোগকারী এসব নেতারা আহমদ শফির ছেলে আনাস মাদানীর অনুসারী এবং সরকারঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তারা কেউ হেফাজতের নতুন কমিটিতে পদ পাননি।
আহমদ শফির মৃত্যুর ৩ মাস পর গত ১৭ ডিসেম্বর তাকে হত্যার অভিযোগে চট্টগ্রামের আদালতে মামলা করা হয়। এ মামলায় হেফাজতের ৩৬ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় বলা হয়, ‘মানসিক নির্যাতন এবং চিকিৎসা না পেয়ে আহমদ শফির মৃত্যু হয়।