রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ১০:১৬ : পূর্বাহ্ণ
সদস্য সচিব ছাড়া গোলাম আকবর খোন্দকারকে আহ্বায়ক করে তার একক নেতৃত্বে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির ৪৩ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। গোলাম আকবরের কাঁধে একক নেতৃত্বের ভার দেওয়া হলেও সাংগঠনকি বিষয়ে তাকে একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেয়নি কেন্দ্র। দলের চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের মতামত নিয়েই বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবরকে আহ্বায়ক কমিটির কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।
গত ২৪ ডিসেম্বর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবরকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগের দিন ২৩ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার ৪৩ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
গোলাম আকবরের কাছে প্রেরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, উত্তর জেলার আওতাধীন সকল উপজেলা, থানা ও পৌর কমিটি চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের মতামত ছাড়া আহ্বায়ক স্বাক্ষর করতে পারবেন না। এছাড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির প্রত্যেক সভায় শামীমকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। চিঠিতে আহ্বায়ক কমিটিকে তৃণমূলের বিভিন্ন ইউনিটের কাউন্সিল সম্পন্ন করে তিন মাসের মধ্যে জেলার সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রের এ চিঠি নিয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
আহ্বায়ক কমিটির নেতারা বলছেন, কেন্দ্রের এই নির্দেশনার মাধ্যমে আহ্বায়ক এককভাবে সাংগঠনিক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। তিনি একক নেতৃত্বের অধিকারী হলেও সাংগঠনিক সম্পাদকের মতামত ছাড়া সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন না।
কমিটির নেতারা মনে করছেন, এই নির্দেশনার মাধ্যমে আহ্বায়ক তার একক নেতৃত্বের ক্ষমতা হারিয়েছেন। গোলাম আকবর খোন্দকার বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদে থেকে দলের একটি বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকের মতামত ছাড়া সিদ্ধান্ত নিতে না পারার বিষয়টি অসম্মানজনকও বলছেন নেতাদের অনেকে।
উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার এতে কোনো সমস্যা দেখছেন না বলে জানিয়েছেন রাজনীতি সংবাদকে। তিনি বলেন, ‘এখানে কতগুলো সাংগঠনিক বিষয় আছে। এখানে আমার দেখাদেখির কিছু নেই। যেভাবে হয়েছে আমি সেভাবেই দেখছি।’
দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার ভয়ে উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতারা কেউ এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সীতাকুণ্ড উপজেলার আহ্বায়ক কমিটির এক সদস্য রাজনীতি সংবাদকে বলেন, আহ্বায়কের সম্মতিতে যদি কেন্দ্র এ নির্দেশনা দিয়ে থাকে, তাহলে এর মাধ্যমে আহ্বায়ক অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। আর যদি কেন্দ্র স্বপ্রণোদিত হয়ে এ নির্দেশনা দিয়ে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে আহ্বায়কের প্রতি কেন্দ্রের শতভাগ আস্থা নেই।
দলীয়ভাবে জানা গেছে, উত্তর জেলার পাশাপাশি একই সময়ে ঘোষিত চট্টগ্রাম মহানগর ও এর আগে দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে সাংগঠনিক সম্পাদককে কেন্দ্র এ ক্ষমতা দেয়নি।
উত্তর জেলার কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদককে আমন্ত্রণ জানানোর বাধ্যবাধকতা নিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে জটিলতা তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন নেতারা।
আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সারোয়ার আলমগীর রাজনীতি সংবাদকে বলেন, সভা-সমাবেশে মধ্যমনি হলো প্রধান অতিথি। উত্তর জেলার সভায় যদি সাংগঠনিক সম্পাদক অংশ নেন তাহলে প্রধান অতিথি কে হবেন-গোলাম আকবর নাকি মাহবুবের রহমান শামীম ? আর গোলাম আকবর সভাপতি হলে প্রধান অতিথি কে হবেন ?
এদিকে সদ্য ঘোষিত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি নিয়ে সংগঠনটির নেতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। কমিটিতে অনেক ত্যাগী নেতাকে বাদ দিয়ে অধিকাংশ নিস্ক্রিয় নেতাকে স্থান দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
জেলা বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতাদের অভিযোগ, ৪৩ সদস্যের এই কমিটিতে ২৩ জনই নিস্ক্রিয় নেতা; যাদের গত ১০ বছরে সাংগঠনিক কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। এই কমিটি গঠনের নেপথ্যে নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বাসিন্দা কেন্দ্রীয় দুই নেতার ‘কূটচাল’ রয়েছে। তারা গ্রুপিং রাজনীতির সুযোগ নিয়ে তাদের অপছন্দের নেতাদের বাদ দিয়ে পছন্দের নেতাদের কমিটিতে স্থান দিয়েছেন।