রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ৩:৪৫ : অপরাহ্ণ
হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন ডেকে হাটহাজারী দারুল উলূম মাদ্রাসার সাবেক প্রধান পরিচালক মরহুম শাহ আহমদ শফির শ্যালক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন আক্রমণ করলেন হেফাজতের বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরীকে। তিনি অভিযোগের তীর ছুঁড়ে বলেন, ‘আহমদ শফির জানাযায় বাবুনগরীর হস্তক্ষেপে জামায়াত-শিবির, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) ও হিযবুত তাহরীরের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছিল।’
আজ শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
আহমদ শফি হত্যা মামলার বাদী মাঈন উদ্দীন হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক কোনো দায়িত্বে না থাকলেও তিনি সংগঠনটির ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মাঈন উদ্দীন দাবি করেন, আজকের সংবাদ সম্মেলনে আল্লামা আহমদ শফির বড় ছেলে ইউসুফ মাদানী উপস্থিতি থাকার কথা ছিল। কিন্তু মামুনুল হক (হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব) বাহিনীর কারণে তিনি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে পৌঁছাতে পারেননি। তাকে হাটহাজারী থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
যদিও সংবাদ সম্মেলন শুরুর ১০ মিনিট আগে হেফাজতের বিগত কমিটির সহকারী যুগ্ম-মহাসচিব মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ‘মাওলানা ইউসুফ মাদানী সম্মেলনস্থলে আসছেন। কিন্তু ৫ মিনিট পরই জানানো হয় মাওলানা ইউসুফ মাদানী সংবাদ সম্মেলনে আসছেন না।’
অথচ আগে থেকেই প্রিন্ট করা সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে ইউসুফ মাদানীকে আসতে বাধা দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এনিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলেও তার সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি মাঈন উদ্দীন।
গত ২৩ ডিসেম্বর হাটহাজারী দারুল উলূম মাদ্রাসায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাবুনগরীর মতো বয়োবৃদ্ধ আলেম মিথ্যাচার করেছেন উল্লেখ করে মাঈন উদ্দীন বলেন, ‘গত ১৬ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় কী ঘটেছিল তা আপনারা সবাই জানেন। কওমী ভিশনের মাধ্যমে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী মাদরাসায় অবস্থান করে সকল ঘটনা লাইভ প্রচার করেছেন। আপনারা দেখেছেন শহীদ আল্লামা শফি হুজুরের রুমে কীভাবে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। নাছির উদ্দিন মুনির, মীর ঈদ্রিস, শহীদুল্লাহ, ইনামুল হাসান, জুনায়েদ (হত্যা মামলার আসামি) উপস্থিত থেকে শফি হুজুরকে জোরপূর্বক মাদ্রাসার প্রধান পরিচালক থেকে পদত্যাগে বাধ্য করেন।’
আহমদ শফি হুজুরের বড় ছেলে ইউসুফ মাদানী বলেছেন তার পিতার মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হয়েছে-সংবাদ সম্মেলনে বলা জুনায়েদ বাবুনগরীর এ কথার উদ্ধৃতি করে মাঈন উদ্দীন বলেন, ‘আমার ভাগিনাকে (ইউসুফ মাদানী) হত্যা করার হুমকি দিয়ে তার ৩ ছেলেকে দেশিয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের সাজানাে বক্তব্য দিতে বাধ্য করেছিলেন। ইতোমধ্যেই ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আমার ভাগিনা ওই দিন কোন পরিবেশে বক্তব্য দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তা দেশবাসীকে জানিয়েছেন।’
উল্লেখ্য, গত ১৫ সেপ্টেম্বর আকস্মিকভাবে হাটহাজারী মাদ্রাসার ভেতর কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় প্রধান ফটক আটকে মাদ্রাসার মধ্যে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসার শুরা কমিটির বৈঠকে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষা পরিচালকসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। প্রধান পরিচালক থেকে আহমদ শফি নিজে পদত্যাগ করেন। ওই দিনই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আহমদ শফিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মারা যান আহমদ শফি।
আহমদ শফির মৃত্যুর পর গত ১৫ নভেম্বর হেফাজতের সম্মেলন হয়। শফিপন্থীদের অংশগ্রহণ ছাড়া অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে হেফাজতের আমির নির্বাচিত হন জুনায়েদ বাবুনগরী। মহাসচিব নির্বাচিত হন নূর হোসাইন কাসেমী। এই কমিটিরই যুগ্ম-মহাসচিব হন মামুনুল হক ও নাসির উদ্দিন মুনির। সম্প্রতি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন নূর হোসাইন কাসেমী।
গত ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে হেফাজতের সাবেক আমির আহমদ শফিকে হত্যার অভিযোগে নালিশি মামলা করেন তার শ্যালক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন।
মামলায় হেফাজতের ৩৬ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।