রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ২:৫৪ : অপরাহ্ণ
ব্রিটেনে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ধরনের সঙ্গে মিল আছে এমন জিনোমের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বাংলাদেশে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান এবং শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) জিনোমিক গবেষণাগার ল্যাব।
বিসিএসআইআর জানায়, গত নভেম্বরের শুরুতে বিসিএসআইআর করোনাভাইরাসের পাঁচটি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে। তাতে পাওয়া মিউটেশনের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাসের মিল রয়েছে।
এ নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে বিসিএসআইআর। ভাইরাসটি বহনকারীদের পরিচয় এবং ঠিকানা জানার চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে বিসিএসআইআরের জীবতাত্ত্বিক গবেষণা বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নভেম্বরের শুরুতে দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের মিউটেশন পাওয়া গিয়েছিল। পাঁচটি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করার সময় নতুন এই মিউটেশন আমাদের নজরে আসে। আন্তর্জাতিকভাবে যেখানে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের তথ্য জমা দেওয়া হয়, সেখানে দেখেছি যে রাশিয়া এবং পেরুতে এর আগে একই ধরনের মিউটেশন দেখা গেছে। তবে ওই দেশ দুটিতে শুধু একজন করে ব্যক্তির নমুনায় এই মিউটেশন পরিলক্ষিত হয়েছিল।’
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে করোনার নতুন যে একটি স্ট্রেইন পাওয়া গেছে, সেটি আগের স্ট্রেইনটির তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি গতিতে ছড়ায় বলে জানানো হয়েছে।
সেলিম খান বলেন, ‘নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে করোনার সর্বশেষ যে সিকোয়েন্স করা হয়েছে, তাতে ভাইরাসটির দুটি স্পাইকে প্রোটিন মিউটেশন পাওয়া যায়। যুক্তরাজ্যে শনাক্ত নতুন ভাইরাসটির স্ট্রেইনে যে বৈশিষ্ট্য আছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশে পাওয়া ভাইরাসটির পুরোপুরি মিল না থাকলেও অনেকটাই মিল রয়েছে।’
বিসিএসআইআরের এই বিজ্ঞানী আরও বলেন, বাংলাদেশের আগে এমন মিউটেশনের খবর রাশিয়া ও পেরুতে পাওয়া যায়। ওই দেশগুলোতে একটি করে নমুনায় এমন মিউটেশন পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে মোট ১৭টি নমুনার মধ্যে পাঁচটিতেই এমন মিউটেশন পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার থেকে ওই নমুনাগুলো জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য নিয়েছিলেন তারা।
তবে কাদের কাছ থেকে এই নমুনাগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল, তা শনাক্ত করতে নমুনার তথ্য এরই মধ্যে ওই সেন্টারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান বিসিএসআইআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যজুড়ে করোনার নতুন ধরন শনাক্তের পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপজুড়ে। এই অবস্থায় গত রোববার (২০ ডিসেম্বর) থেকেই ব্রিটেনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের সিদ্ধান্ত নেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
নতুন ধরনের এই কোভিড ভাইরাস (ঠটও ২০২০১২/০১) ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদল করতে পারে, জন্ম দিতে পারে নতুন ভাইরাসের। এছাড়া নতুন ধরনের এই ভাইরাস ৭০ শতাংশ সংক্রামক। ইতিমধ্যে এই ভাইরাসে ডেনমার্ক, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়ামসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইইউ। তাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সব রকমের বিমান ও স্থল যোগাযোগ। বিশেষ করে পণ্য পরিবহনে ফ্রান্সের সঙ্গে লাগোয়া দেশটির বর্ডারও বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। জার্মানিতে এখনো এই নতুন ভাইরাসের কেউ আক্রান্ত না হলেও আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অবশ্য নতুন ভাইরাস নিয়ে শঙ্কিত না হয়ে বিশ্ববাসীকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।