রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ৫:২৮ : অপরাহ্ণ
বিএনপি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার আহ্বায়ক হচ্ছেন গোলাম আকবর খোন্দকার-দুই সপ্তাহ আগে রাজনীতির মাঠে এই খবর চাউর হলে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এই ক্ষোভের আগুনে জেলা বিএনপির বিবাদমান দুই পক্ষের নেতা গিয়াস কাদের ও আসলাম চৌধুরী অনুসারীদের বিরোধের বরফ গলে গেছে। বিরোধ ভুলে একাকার হয়ে যাওয়া দুই পক্ষের নেতারা গোলাম আকবরের চেয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমানকে ‘উত্তম’ মনে করছেন। আহ্বায়ক কমিটির রূপরখো নিয়ে তারা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছেন।
২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল কেন্দ্র থেকে আসলাম চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও কাজী আবদুল্লাহ আল হাসানকে সদস্য সচিব করে উত্তর জেলা বিএনপির ৯৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আসলাম চৌধুরী কারাগারে থাকায় আর দেড় বছর আগে কাজী হাসান মারা যাওয়ার পর অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে জেলা বিএনপি।
নেতৃত্বশূন্য উত্তর জেলা বিএনপিকে পুনর্গঠন করতে গত দেড় বছর ধরে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। সর্বশেষ দুই সপ্তাহ আগে বিএনপির কেন্দ্র থেকে আবার কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ার কথা শুনা যায়। এই প্রক্রিয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবরের একক নেতৃত্বে ৫১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কথা দলীয় মহলে ছড়িয়ে পড়ে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে বলে রাজনীতি সংবাদকে জানিয়েছেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ।
দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, গোলাম আকবরকে আহ্বায়ক করে ৫১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির একটা খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
২৭ বছর জেলা বিএনপির নেতৃত্বে থাকা গোলাম আকবরকে এখন আহ্বায়ক হিসেবে মানতে নারাজ জেলার তৃণমূল নেতাকর্মীরা। গত ৬ বছর ধরে প্রকাশ্যে দ্বিধাবিভক্ত গিয়াস কাদের ও আসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা গোলাম আকবর বিরোধী ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছেন। যদিও দুই ধারার দুই শীর্ষ নেতা দীর্ঘ দিন ধরে চট্টগ্রামের রাজনীতির মাঠে নেই। গত তিন বছর ধরে কারাবন্দি আসলাম চৌধুরী। এক বছর আগে মামলা মাথায় নিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী।
উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম আকবর খোন্দকার রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদ নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। কারণ আমি ২৭ বছর উত্তর জেলার নেতৃত্বে ছিলাম। একক নেতৃত্ব দিয়েছি, বহু নেতৃত্ব সৃষ্টি করেছি। এখন দল যদি আবার আমাকে দায়িত্ব দেয় তা পালন করতে বাধ্য।’
জেলা বিএনপির দুই পক্ষের বিবাদমান নেতারা বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা রাজনীতির ধর্ম। তবে যারা কিলাকিলি করছে তারা সবাই আমার সৃষ্টি। ১-২ জন ছাড়া। দুই জন হবে কিনা জানি না। বাকি সবাই আমার হাতে গড়া নেতা।’
দুবাইতে অবস্থানরত গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ফোনে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘দলের দুঃসময়ে উত্তর জেলা বিএনপির সকল নেতাকর্মী বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এ অবস্থায় দলের নেতাকর্মীদের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে কমিটি করা উচিত বলে মনে করি।’
দলীয় সূত্রের খবর, গোলাম আকবরকে ধরাশয়ী করতে গিয়াস কাদের ও আসলাম চৌধুরীর অনুসারী নেতারা গত দুই সপ্তাহে ৬ দফায় বৈঠক করেছেন। দফায় দফায় বৈঠক করে দুপক্ষের নেতাদের অনেকে গোলাম আকবরের পরিবর্তে প্রয়োজনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানকে নেতৃত্বে আনতে মত দিয়েছেন। কয়েকজন নেতা নোমানের বিষয়ে ইতোমধ্যে কেন্দ্রে বিএনপির একজন নীতিনির্ধারকের কাছে প্রস্তাবও দিয়েছেন।
আসলাম চৌধুরীর ঘনিষ্ট নেতা হিসেবে পরিচিত উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আবদুল্লাহ আল নোমান দীর্ঘ দিন উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। তার সাংগঠনিক সক্ষমতা রয়েছে। জেলা বিএনপির সকল নেতাকর্মীর কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তার ব্যাপারে কয়েকজন নেতা মত দিয়েছেন।’
গোলাম আকবরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তিনি বছরে একবার চট্টগ্রামে আসেন। তার কর্মী নেই। নেতাকর্মীদের সাথে তার কোনো সংযোগ নেই। তিনি কাকে নিয়ে কমিটি করবেন ?’
দলীয় সূত্র জানায়, গত ৭ ডিসেম্বর উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিনের নগরীর পাঁচলাইশের বাসায় এক রুদ্ধধার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে তারা আহ্বায়ক কমিটির একটি রূপরেখা তৈরি করেন। কমিটির ভারসাম্য রক্ষা করতে আহ্বায়কের সাথে সদস্য সচিব এবং সাত উপজেলা থেকে সাতজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচন করে সমন্বয়ের মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা করা হয়। এই প্রস্তাবনার বিষয়টি ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরোয়ার আলমগীর বৈঠক থেকেই ফোনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জানিয়ে দেন। তিনি এই প্রস্তাবনার বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করবেন বলে তাদের জানান।
গিয়াস কাদের চৌধুরীর অনুসারী ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরোয়ার আলমগীর রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমরা দলের মহাসচিবের কাছে কমিটির একটা রূপরেখা দিয়েছি। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা চাই, সমন্বয়ের মাধ্যমে ভারসাম্য রক্ষা করে কমিটি হোক। আমরা একক নেতৃত্ব মেনে নিবো না। যদি একক নেতৃত্ব হয়, তাহলে দল এখন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার যে আন্দোলন করছে সেটার সাথে তা সাংঘর্ষিক হবে।’
গিয়াস কাদের চৌধুরীর অনুসারী জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘কাউকে একক নেতৃত্ব দেওয়া হলে তিনি যদি মামলার কারণে গ্রেফতার হন কিংবা অসুস্থ হন তাহলে সংগঠনের হাল ধরবেন কে ? তাই আমরা আহ্বায়কের সাথে একজন সদস্য সচিব ও সাত উপজেলা থেকে সাতজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে কমিটির একটা প্রস্তাবনা তৈরি করেছি। এ প্রস্তাবনার বিষয়টি ইতোমধ্যে আমরা কেন্দ্রকে জানিয়েছি।’
জেলা বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে জানান, সব পক্ষের নেতাদের মতামত ছাড়া কমিটি হলে সংগঠনে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।