রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন
প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর ২০২০, ১:২৯ অপরাহ্ণ
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিজয়ের ঊষালগ্নে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দোসরদের সহায়তায় এ দেশের যে মেধাবী সন্তানদের হত্যা করেছিল, সেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছে জাতি।
সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ১০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এসময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল সামরিক কায়দায় সালাম জানায়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
পরে মন্ত্রিসভার প্রতিনিধিরা এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করেন।
রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং মোমবাতি জ্বালিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করছে সর্বস্তরের মানুষ।
পাকিস্তানি ঘাতকেরা চেয়েছিল বাঙালিকে মেধা-মননশূন্য করতে। এ জন্য তারা বেছে বেছে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দার্শনিকসহ বিশিষ্টজনদের। তাদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানী ঘাতকরা। পরে শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। পরে তা বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
রাতের প্রথম প্রহরে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দেয়া হয়। ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শ্রেণি-পোশার মানুষ। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে শহীদ বেদীতে রাখা হয় জ্বলন্ত মোমবাতি।
সোমবার ভোর থেকে নানা বয়সী মানুষ রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হন। পতাকা আর ফুল হাতে সকাল থেকেই নানা বয়সের মানুষ জড়ো হন শহীদ বেদীতে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষের দেয়া ফুলেল শ্রদ্ধায় ভরে উঠে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ এলাকা। তাদের স্মরণ করতে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এসেছেন শহীদদের পরিবারের সদস্যরা।
তবে করোনা মহামারীর কারণে অন্য সময়ের তুলনায় এবার মানুষের উপস্থিতি ছিল কম।
প্রসঙ্গত ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিধনে মাঠে নামে।
রাতের অন্ধকারে বাসা কিংবা কর্মস্থল থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে তারা শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের হত্যা করে।
এ হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করা। দেশের নানা জায়গায় হত্যাযজ্ঞ চললেও মূল হত্যাযজ্ঞ চলে রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে।
সেই থেকে ১৪ ডিসেম্বর দিনটিকে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, পালন করে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে।