সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ১৯ কার্তিক, ১৪৩১ | ১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

বিনম্র শ্রদ্ধায় বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ১২:০৯ : পূর্বাহ্ণ

আজ জাতির জীবনে এক বেদনাবহ দিন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে ঘটেছিল এক মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে লিপ্ত হয়েছিল ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে। স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতি যেন মেধায়-মননে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় মেতে ওঠে। পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগিতায় রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ধরে ধরে হত্যা করে।

দিবসটি স্মরণে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

বিজয় উৎসবের আগে এই দিনটিতে জাতি গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করে আসছে স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। মিরপুর ও রায়েরবাজারের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আজ সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে নামবে অগণিত মানুষের ঢল। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা, সর্বস্তরের মানুষ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন, বিশেষত নতুন প্রজন্মের বাঙালিরা গভীর শ্রদ্ধা ও বিনয়ে স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণপূর্বক পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।

কি ঘটেছিল ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর?

ইতিহাস বলছে, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম বর্বর ঘটনা। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রাখে।

১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই নিকট-আত্মীয়রা মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে স্বজনের লাশ খুঁজে পায়। বুদ্ধিজীবীদের নিথর দেহজুড়েই ছিল আঘাতের চিহ্ন, চোখ, হাত-পা বাঁধা, কারও কারও শরীরে একাধিক গুলি, অনেককে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে। লাশের ক্ষতচিহ্নের কারণে অনেকেই তাদের প্রিয়জনের মৃতদেহ শনাক্তও করতে পারেননি।

এই গণহত্যা চালানো হয় পরিকল্পিতভাবে। ডিসেম্বরে এসে নিজেদের পরাজয় অনিবার্য জেনে পাকিস্তানি দখলদাররা বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার গোপন নীলনকশা গ্রহণ করে। তারা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরি করে তা তুলে দেয় তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর সশস্ত্র ক্যাডার গ্রুপ রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের হাতে।

এরপর ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই হিটলিস্ট অনুযায়ী পাকবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘৃণ্যতম অপকর্ম চালানো হয়। সহস্রাধিক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে পৈশাচিকভাবে হত্যা করে তারা।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. মোহাম্মদ মুর্তজা, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, ড. সন্তোষ ভট্টাচার্য, ডা. মোহাম্মদ শফি, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজামুদ্দিন আহমেদ, খন্দকার আবু তালেব, আনম গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, সৈয়দ নাজমুল হক, জহির রায়হান, আলতাফ মাহমুদ, ড. আবদুল খায়ের, ড. সিরাজুল হক খান, ড. ফয়জল মহী, ডা. আবদুল আলীম চৌধুরী, সেলিনা পারভীন, অধ্যাপক হবিবুর রহমান, কবি মেহেরুন্নেসা, গিয়াস উদ্দীন আহমদ প্রমুখ।

এ ঘৃণ্যতম ঘটনার চার দশক পর সেই ঘাতকদের বিচার হয়েছে, হচ্ছে। বিচারের পর আদালতের রায়ে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছে মিরপুরের কসাই নামে পরিচিত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে।

ফাঁসি কার্যকর হয়েছে আলবদর নেতা ও জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামী, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ অন্যদের।

মন্তব্য করুন


আরও খবর