রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ৮:০২ : অপরাহ্ণ
মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডে কক্সবাজারের তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেনের উদাসীনতা ও গাফিলতি ছিল বলে প্রমাণ পেয়েছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এই কারণে মামলার চার্জশিটে এসপি মাসুদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
রোববার (১৩ ডিসেম্বর) কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের একটি অডিও প্রকাশ পেয়েছিল। সে বিষয়ে তদন্তে কি মিলেছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আগ থেকেই ওসি প্রদীপ সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে এসেছিল। তা নিয়ে এসপি মাসুদ অত্যন্ত উদাসীন ছিলেন। পাশাপাশি স্থানীয় সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফাসহ স্থানীয়দের নির্যাতনের ঘটনা গণমাধ্যম আসার পরেও পুলিশ সুপার সম্পূর্ণ উদাসীন ছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনা ঘটার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করে আহত মেজর সিনহাকে চিকিৎসা ব্যবস্থা না করাসহ বিভিন্ন বিষয় তদন্ত কর্মকর্তা আমলে এনেছেন। পুলিশ সুপারের অপেশাদার আচরণ এবং দায়িত্ব পালনে আরো বেশি সতর্ক হওয়ার দরকার ছিল বলে মনে করেন তদন্ত কর্মকর্তা।’
র্যাব মুখপাত্র কর্নেল আশিক বিল্লাহ আরও বলেন, ‘সার্বিক ঘটনা বিবেচনায় একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ পুরা ঘটনা তদারকিতে ঘাটতি ছিল। এই পরিপেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা মাসুদের আচরণের বিরুদ্ধে এবং দায়িত্বহীনতার বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় ব্যবস্থা বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন।’
গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মুহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত শেষে আলোচিত মামলাটির অভিযোগপত্র আজ দাখিল করেছে র্যাব।
এরপর বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে অভিযোগপত্র নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সংস্থার আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেন।
কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘জুলাই মাসের ৭ তারিখে মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান, শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত, রূপতি তারা নীলিমা রিসোর্টে অবস্থান করেন। ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও ডকুমেন্টারি করার জন্য তারা টেকনাফ গিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে রূপতি ফিরে আসে। সে সময় সেখানে বেশ কিছুদিন থাকাকালীন সময়ে স্থানীয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের আন্তরিকতা গড়ে ওঠে। তাদের কাছ থেকে ওসি প্রদীপের ইয়াবা বাণিজ্য নিয়ে নানা বিষয় জানতে পারেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। এ বিষয়ে সিনহা ক্যামেরাসহ ওসি প্রদীপ এর কাছে বক্তব্য নিতে যান। সে সময়ে ওসি প্রদীপ তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে যায়। বক্তব্যের পরিবর্তে তাদেরকে টেকনাফ ছেড়ে চলে যাবার সরাসরি হুমকি দেন।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মূলত দুটি কারণে ওসি প্রদীপ এই ঘটনাটি ঘটান। একটি ওসি প্রদীপ এর ইয়াবা বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়। অন্যটি সিনহা এই তথ্য যেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানতে পারেন। হুমকির পারেও যখন মেজর সিনহা রাশেদ তাদেরই ইউটিউব এর কাজ ও ইয়াবা অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। তখন ইন্সপেক্টর লিয়াকত ও ওসি প্রদীপ সহ অন্যরা পরিকল্পনা করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান।’
মেজর সিনহা হত্যার পর গত ৫ আগস্ট তাঁর বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয় টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে।