রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১১ ডিসেম্বর, ২০২০ ১১:১৯ : পূর্বাহ্ণ
আবারো ভাঙনের মুখে পড়েছে সিলেট বিএনপি। নেতারা বিভক্ত। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় নেতারাও নীরব। সিলেটে দলের দীর্ঘদিনের অভিভাবক এমএ হকের মৃত্যুর পর থেকে কোন্দল ঠেকাতে এগিয়ে আসছেন না কেউ। বরং সিলেটের কেন্দ্রীয় নেতারাও বিভক্ত হয়ে পড়ছেন। এই অবস্থায় সিলেট বিএনপি’র আগামী সম্মেলন নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত হচ্ছেন বর্তমান আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার। তার ‘নিরপেক্ষ’ ভূমিকা না থাকার কারণে কোন্দল আরো ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতারা।
২০১৯ সালের অক্টোবরে যখন সিলেট জেলা বিএনপি’র সাবেক কমিটি ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয় তখনই খোঁজা হয়েছিল একজন ‘গ্রহণযোগ্য’ আহ্বায়ক। কারণ- দলটির নীতিনির্ধারকরা চেয়েছিলেন সবার অংশগ্রহণে জেলা সম্মেলনের আয়োজন করার। ওই সময় জেলার আহ্বায়ক হতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো প্রয়াত নেতা এমএ হক, ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, সাবেক আহ্বায়ক এডভোকেট নুরুল হক সহ কয়েকজনকে। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ আহ্বায়ক হতে এগিয়ে আসেননি। কোন্দল থেকে নিজেদের দূরে রাখতে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ কারণে সিলেট জেলা বিএনপি’র সাবেক কমিটির নেতারা গ্রহণযোগ্য আহ্বায়ক খুঁজে বের করতে অনেকখানি ব্যর্থ হন। তাদের ডাকে কেউ সাড়া না দেয়ায় তারা বিষয়টি জানিয়েছিলেন কেন্দ্রকে। এরপর কেন্দ্রের নির্দেশে সাবেক কমিটির সহ-সভাপতির তালিকা থেকে কাউকে আহ্বায়ক করার চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়। এক পর্যায়ে আহ্বায়কের তালিকায় নাম আসে জেলা কমিটির সহ-সভাপতি কামরুল হুদা জায়গীরদারের নাম। তিনি আবার বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়কও।
জেলা বিএনপি’র বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, সিলেট জেলা বিএনপি’র বিগত কমিটিতে উপজেলা পর্যায়ের সিনিয়র নেতাদের সহ-সভাপতি করা হয়েছিল। এর মধ্যে জায়গীরদার ছিলেন। তবে তিনি সিলেট জেলা বিএনপি’র নীতিনির্ধারক মহলে ছিলেন না। কিন্তু হঠাৎ করেই তার নাম প্রস্তাব আকারে পাঠান জেলা বিএনপি’র সাবেক নেতারা। আর সেটি কেন্দ্র থেকে অনুমোদন হয়ে আসে। এরপর থেকে কামরুল হুদা জায়গীরদার হন সিলেট জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক।
সম্প্রতি সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির ৯ সদস্য কামরুল হুদা জায়গীরদারের বিতর্কিত ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন। তারা দাবি করেছেন- ‘কামরুল হুদা জায়গীরদার নিরপেক্ষ হলে সিলেট জেলা বিএনপিতে বর্তমান সংকট হতো না। কিন্তু তিনি আহ্বায়ক কমিটির একাংশের নেতাদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করার কারণেই বর্তমানে সাংগঠনিক সংকটের মুখে পড়েছে জেলা বিএনপি।’
গত বছরের অক্টোবরে সিলেট জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকেই নানা সংকট চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জেলা সম্মেলনের কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি। এক বছরের মধ্যে জেলা কমিটির নেতারা ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলন শুরু করতে পারেননি।
দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, জেলা আহ্বায়ক সাবেক কমিটির সভাপতি আবুল কাহের শামীম ও সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের কথা মতো ১৮টি ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। এরপর এই ১৮টি ইউনিটের নেতাদের দিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলনের উদ্যোগ নেন। এতে করে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী, আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে থাকা ৯ সদস্য ক্ষুব্ধ হন। তারা প্রতিবাদী হলে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাক, এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান, ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী সহ কয়েকজন উদ্যোগী হয়ে বিষয়টি মিটমাটের চেষ্টা করেন। তাদের একান্ত প্রচেষ্টার কারণে প্রয়াত নেতা এমএ হকের জীবদ্দশায় গত ফেব্রুয়ারিতে তার বাসায় বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে ফলাফলও বেরিয়ে আসে।
এতে ১৮টি ইউনিটে নতুন করে আরো ৬ জন সদস্য কো-অপ্ট করার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে ওই প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
সিলেট জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এমরান আহমদ চৌধুরী গতকাল দাবি করেছেন ‘সিলেট জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদারের নিরপেক্ষতার অভাব থাকার কারণে সিলেট জেলা বিএনপিতে এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি নিরপেক্ষ হয়ে ব্যক্তি স্বার্থের পরিবর্তে দলের স্বার্থে কাজ করলে কখনো সংকট হতো না। এখন তার ওপর আস্থা রাখাও দায় হয়ে পড়েছে।
তিনি একাংশের মুখপাত্র হয়ে কাজ করছেন। সম্মেলনের মাধ্যমে ওই অংশের হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। এটি তার ঋণ শোধেরও একটি প্রক্রিয়া। কারণ পূর্বের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকার কারণেই উপজেলার নেতা হয়ে জেলার আহ্বায়ক হতে পেরেছিলেন তিনি।’
তবে সিলেট জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার সিলেট জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটিতে তিনি নিরপেক্ষ ভূমিকায় রয়েছেন বলে দাবি করেন। কারণ আহ্বায়ক কমিটির ৯ সদস্যের দাবির প্রেক্ষিতে আরো ৬ সদস্য কো-অপ্ট করার সিদ্ধান্তেও তার মত ছিল। এবং কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিমউদ্দিন মিলনের কাছে তারা যে তালিকা দিয়েছিলেন সেই তালিকায় তিনি না দেখেই দস্তখত করেছেন। এরপরও তারা সন্তুষ্ট হতে না পারা দুঃখজনক বলে জানান তিনি।
কামরুল হুদা জায়গীরদার বলেন, নিজেদের মধ্যে কাদা ছুড়াছুড়ি করে আমরা অনেক সময় নষ্ট করে ফেলেছি। এ কারণে তিনি এখন ইউনিয়ন সম্মেলন শুরু করতে ঢাকায় অবস্থান করছেন। কেন্দ্রের অনুমতি নিয়ে তিনি ফিরেই সিলেট জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সম্মেলন করে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন বলে জানান। এরপর একই ভাবে উপজেলা ও পৌরসভায় কাউন্সিলের পর জেলা কমিটির সম্মেলন ও কাউন্সিল করবেন।