রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১০ ডিসেম্বর, ২০২০ ১২:১৭ : অপরাহ্ণ
বাস্তবে ধরা দিল স্বপ্ন। দেশের ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণের অক্ষরে লেখা হলো একটি নাম ‘পদ্মা সেতু’। দক্ষিণবঙ্গের প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যে সেতুর স্বপ্ন দেখেছে, সেই স্বপ্নটি দৃশ্যমান হলো আজ।
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান বসানো হয় সর্বশেষ ৪১তম ‘টু-এফ’ নামের স্টিলের কাঠামো (স্প্যান)। ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ স্প্যানটি স্থাপিত হওয়ার মধ্য দিয়ে মিলিত হলো প্রমত্ত পদ্মার দুই তীর। ফলে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।এর মাধ্যমে রচিত হলো এক নতুন মাইফলক। ৩ বছর ২ মাস ১০ দিনে দেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বড় কাজের সমাপ্তি হয়েছে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৯ জেলার সঙ্গে সারা দেশের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হওয়ার পথও উন্মুক্ত হওয়ার পথে।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের বলেন, ৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্যে দিয়ে সেতুর ৪২টি পিলারের ওপর সবকয়টি স্প্যান বসানো সম্পন্ন হয়েছে। জাজিরা প্রান্তে আগেই ২০টি স্প্যান বসানো হয়। আর মাওয়া প্রান্তে বসানো হয়েছে ১৯টি স্প্যান। ১টি স্প্যান বসানো হয় মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের মাঝখানে।
এ বিশাল কর্মযজ্ঞে দেশি-বিদেশি ২০ হাজার প্রকৌশলী, শ্রমিকদের মেধা ও অক্লান্ত পরিশ্রম জড়িত। কাজ শুরুর দিকে নানা অনিশ্চিয়তা থাকা সত্ত্বেও সেতুর কাজ এগিয়ে যাওয়ায় জেলাবাসীসহ দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, শ্রমিকদের মধ্যে বইছে উৎসবমুখর একটি পরিবেশ।
সড়ক এবং রেলের স্ল্যাব বসানো সম্পন্ন হলে সেতুতে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সরকার আগামী বছরের ডিসেম্বরে সেতুটি চালু করার ঘোষণা দিয়েছে।
পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি খুঁটির ওপর বসেছিল ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। বাকি ৪০টি স্প্যান বসাতে তিন বছর দুই মাস লাগল। এর মধ্যে গত দুই মাসেই ১০টি স্প্যান বসেছে।
পদ্মা সেতুর যাত্রাপথ সহজ ছিল না। বলা হয় দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনের পর সবচেয়ে খরস্রোতা নদী পদ্মা। প্রতিটি কাজে প্রকৃতির বিরূপ আচরণ মোকাবেলা করতে হয়েছে। তাই ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বের প্রথম স্প্যান বসলেও পুরো ৪১টি শেষ করতে লাগল তিন বছর তিন মাস।
এর আগে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল পদ্মা সেতুর। শুরুতে একেকটি স্প্যান বসাতে সময় লেগেছিল কয়েক মাস। তবে গত দুই মাসে আটটি স্প্যান ও এ মাসে একটি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে প্রকৌশলীরা কাজের অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর উপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।
মূল সেতু নির্মাণের কাজটি করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি কোম্পানি সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।