জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘ভাস্কর্য ছুড়ে ফেলার’ হুমকি ও ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, চরমোনাই পীরের ভাই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিম এবং হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মামুনুল হকের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দুটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে।
আজ (৭ ডিসেম্বর) সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলা দুটি করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি আইনজীবী মশিউর মালেক।
আজ বেলা ১১টার দিকে মামলা গ্রহণের বিষয়ে শুনানি হয়। আদালত মামলা দুটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আনিসুজ্জামান বলেন, মামুনুল হকসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা তদন্ত করে ৭ জানুয়ারির মধ্যে আদালতে পিবিআইকে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৩ ও ২৭ নভেম্বর ঢাকার ধোলাইপাড়, বিএমএ মিলনায়তন ও হাটহাজারী মাদ্রাসায় আসামিরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন। এতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।
অভিযোগে আরও বলা হয়, অভিযুক্ত মমিনুল হক ১৩ নভেম্বর রাজধানীর তোপখানা রোডের বিএমএ ভবনের মিলনায়তনে বলেছিলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন করে তারা বঙ্গবন্ধুর সুসন্তান হতে পারে না। এ মূর্তি স্থাপন বন্ধ করুন। যদি আমাদের আবেদন মানা না হয়, আবারও তৌহিদি জনতা নিয়ে শাপলা চত্বর কায়েম হবে।
একইদিন অভিযুক্ত সৈয়দ ফয়জুল করিম ধোলাইখালের নিকটে গেণ্ডারিয়া নামক স্থানে মুসল্লিদের হাত উঁচু করে শপথ পড়িয়ে নেন যে, ‘আন্দোলন করব, সংগ্রাম করব, জেহাদ করব। রক্ত দিতে চাই না, দেয়া শুরু করলে বন্ধ করব না। রাশিয়ার লেলিনের বাহাত্তর ফুট মূর্তি যদি ক্রেন দিয়ে তুলে সাগরে নিক্ষেপ করতে পারে তা হলে আমি মনে করি শেখ সাহেবের এই মূর্তি আজ হোক, কাল হোক খুলে বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করবে।’
অভিযুক্ত জুনাইদ বাবুনগরী হাটহাজারীতে এক সভায় বলেন, ‘মদিনা সনদে যদি দেশ চলে তা হলে দেশে কোনো ভাস্কর্য থাকতে পারে না।’ তিনি সরকারকে হুশিয়ার করে বলেন, ‘ভাস্কর্য নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে সরে না দাঁড়ালে আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটবে এবং ওই ভাস্কর্য ছুড়ে ফেলা হবে।’
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরুদ্ধে ইসলামভিত্তিক দলগুলো আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনের মধ্যে শুক্রবার রাতের আঁধারে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জড়িত স্থানীয় মাদ্রাসার দুই ছাত্র ও দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতার দুই মাদরাসাছাত্র পুলিশকে জানিয়েছেন, মামুনুল হক ও ফয়জুল করিমের বয়ান শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করেন।
এ ঘটনায় দেশব্যাপী ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ভাস্কর্যবিরোধীদের রুখে দেয়ার হুশিয়ারি দিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ।
এর আগে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মুহাম্মদ মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট মশিউর মালেক।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণে বিরোধিতা করে উত্তেজনাকর বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১২০বি, ১৫৩ ও ১২৪ক ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে এ মামলা করা হয়।
রোববার (৬ ডিসেম্বর) বিকালে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর এ আবেদন দেয়া হয়।
মো. জিশান মাহমুদ বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৯৬ ধারার বিধান মোতাবেক রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আমলে নেয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার মঞ্চের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে মামলা দায়েরের কথা জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, আমরা দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি, ভাস্কর্যের বিরোধিতার নামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটাক্ষ ও অবমাননা করে মামুনুল গংরা প্রকাশ্যে বড় বড় গলায় কথা বলছে। মৌলবাদী অপশক্তিরা ধর্মের দোহাই দিয়ে ভাস্কর্য নিষিদ্ধ বলে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এরা ভাস্কর্য ও মূর্তির পার্থক্যের অপব্যাখ্যা দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ না নিলে আমরা দেশ ও জাতির সমূহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করছি। অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।