চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-হালিশহর-খুলশী) আসনের সাংসদ ডা. আফছারুল আমীন ৯ মাস ও চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) সাংসদ এম এ লতিফ ৪ মাস ধরে অসুস্থ। আফছারুল আমীন প্রায় সময় থাকেন ঢাকায়। এম এ লতিফ নগরীর দক্ষিণ খুলশীর বাসায় ৪ মাস ধরে ঘরবন্দি। চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ দুটি সংসদীয় এলাকা থেকে ক্ষমতাসীন দলের দুই সাংসদের যোগাযোগ অনেকটা বিচ্ছিন্ন। এতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন দুই সংসদীয় এলাকার সাধারণ মানুষ।
চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে পরপর তিন বার নির্বাচিত সাংসদ আফছারুল আমীনের পরিবারের স্বজনরা জানিয়েছেন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে তার ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। গত ২৩ এপ্রিল তিনি সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেন। চিকিৎসার প্রয়োজনে তিনি বেশিরভাগ সময় থাকেন রাজধানীর উত্তরার বাসায়। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তিনি কারো সাথে ফোনে কথা বলেন না।
৭০ বছর বয়সী আফছারুল আমীনের ছোট ছেলে ডা. মাহিদ উল আমীন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমার বাবা শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ার কথা জেনে মোটেও বিচলিত ও হতাশ হননি। তিনি স্বাভাবিক আছেন। চিকিৎসার প্রয়োজনে উনাকে ঢাকায় থাকতে হচ্ছে।’
দৃঢ়চেতা মানুষ হিসেবে পরিচিত মুক্তিযোদ্ধা আফছারুল আমীন ক্যান্সারের মত ঘাতক ব্যাধি নিয়েও সদ্য শেষ হওয়া সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কয়েকটি সভায়ও অংশ নিয়েছেন। তবে তিনি এর মধ্যে কয়েকবার চট্টগ্রামে আসলেও এলাকার সামাজিক ও দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক মন্ত্রী আফছারুল আমীন সর্বশেষ গত ২০ নভেম্বর নীরবে চট্টগ্রামে আসেন। ৯ দিন তার হালিশহর এলাকার বাসায় থেকে তিনি আবার ঢাকায় উড়াল দেন। এসময় তিনি এলাকার কোনো সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেননি। এলাকার সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর সাথেও সাক্ষাত করেননি।
আফছারুল আমীনের ব্যক্তিগত সহকারী দেলোয়ার হোসেন রাজনীতি সংবাদকে জানান, তিনি নিকটাত্মীয়দের সাথে দেখা করতে চট্টগ্রামে এসেছিলেন। নিকটাত্মীয় ছাড়া কারো সাথে সাক্ষাত করেননি। ২৯ নভেম্বর তিনি ঢাকায় চলে গেছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, আফছারুল আমীনের অনুপস্থিতিতে এলাকায় দলীয় কর্মকাণ্ড কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া সাধারণ মানুষ তাকে সামাজিক কর্মকাণ্ডে না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন।
হালিশহর এলাকার বাসিন্দা নগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘তিনি (আফছারুল আমীন) ৯ মাস ধরে অসুস্থ। এতে এলাকার মানুষের অনেক অসুবিধা হচ্ছে। এলাকার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে মানুষ এমপিকে পাচ্ছেন না। রাজনৈতিকভাবেও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
হালিশহর থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ফয়েজ আহম্মেদ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘তার (আফছারুল আমীন) ভাই ও ছেলে এলাকার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তদারকি করেন। কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।’
জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আফছারুল আমীনের অনুপস্থিতিতে তার ভাই ডা. এরশাদুল আমীন ও ডা.আরিফুল আমীন এবং ছেলে ফয়সাল আমীন সংসদীয় এলাকার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তদারকি করছেন।
ডা.আরিফুল আমীন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমরা যতটুকু পারছি, এলাকার মানুষের অভাব-অভিযোগ ও বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। দলীয় কর্মকাণ্ডেও আমরা সম্পৃক্ত থাকার চেষ্টা করি। এটা ঠিক যে, তিনি (আফছারুল আমীন) তার জায়গা থেকে যে ভূমিকা রাখতেন, সেটা তো আমাদের পক্ষে সম্ভব না।’
গত ২৪ জুলাই উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংকক গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে পরপর তিন বার নির্বাচিত সাংসদ এম এ লতিফ। এর আগে গত ৪ জুন তিনি নগরীর মেট্টোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগস্টের মাঝামাঝি তিনি ব্যাংকক থেকে দেশে ফিরেন। দেশে ফেরার পর তিনি নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন। সামাজিক ও দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে তাকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। গত প্রায় চার মাস ধরে তিনি নগরীর দক্ষিণ খুলশীর বাসায় রয়েছেন। দেশে ফেরার কয়েকদিন পর তার কয়েকজন ঘনিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা তার সাথে সাক্ষাত করেছেন। কিন্তু পরে তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও সংসদীয় এলাকার মানুষের সাথে সাক্ষাত বন্ধ করে দেন। নিজের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনও বন্ধ রেখেছেন।
এম এ লতিফের স্বজনরা কেবল বলছেন, তিনি অসুস্থ। হার্টের সমস্যা রয়েছে।
এম এ লতিফের বড় ছেলে ওমর ফারুকের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘তিনি অসুস্থ। হার্টের সমস্যা। বাসায় বিশ্রামে আছেন।’
চট্টগ্রাম-১১ আসনের আওয়ামী লীগের নেতারা ধারণা করছেন, সাধারণ কোনো অসুখ হলে মিশুক প্রকৃতির এই লোক (লতিফ) এতোদিন বাসায় আবদ্ধ থাকতেন না।
বন্দর-পতেঙ্গা এলাকার কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা লতিফের পারিবারিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রাজনীতি সংবাদকে জানিয়েছেন, তিনি (লতিফ) হয়তো কোনো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত।
বন্দর এলাকার বাসিন্দা নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জহুর আহম্মেদ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘তিনি (লতিফ) ব্যাংকক থেকে আসার পর আমি তার বাসায় সাক্ষাত করতে যাই। অসুস্থতার বিষয়ে তিনি খোলাসা করে কিছু বলেননি। তবে তার পরিবারের স্বজনদের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, তিনি (লতিফ) হয়তো দুরারােগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত। তিনি এখন কারো সাথে সাক্ষাত করছেন না, ফােনেও কথা বলছেন না।’
ইপিজেড থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হারুনুর রশিদ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘শুনেছি, তিনি (লতিফ) দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। বাসায় থাকেন। কারো সাথে সাক্ষাত করেন না। সাধারণ মানুষ সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাকে পাচ্ছেন না। তিনি কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে সংসদীয় এলাকার সামাজিক কর্মকাণ্ড সচল রাখতে পারতেন।’