রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন
প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর ২০২০, ১২:৩৪ অপরাহ্ণ
সীতাকুণ্ড পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে এক-দুজন নয়, ১৭ জন ব্যক্তি প্রার্থী হতে চান। কিন্তু চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা কাঁটছাঁট করে ১৭ থেকে ৯ জনে নিয়ে এসেছে। বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীর হিড়িক নেই। প্রার্থী হতে চান মাত্র দুজন।
তফসিল অনুযায়ী, সীতাকুণ্ড পৌরসভার নির্বাচন হবে ২৮ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ৩ ডিসেম্বর এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহার ১০ ডিসেম্বর।
১৯৯৮ সালে ১ এপ্রিল ২৮ বর্গমাইল আয়তনের নয়টি ওয়ার্ড নিয়ে সীতাকুণ্ড পৌরসভা গঠিত হয়। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, হালনাগাদ ভোটার তালিকায় পৌরসভায় ভোটার রয়েছেন মোট ৩৪ হাজার ৮১৩ জন। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
গত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদিউল আলম ১৪ হাজার ৮২৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী আবুল মনসুর পান ২ হাজার ৯৪২ ভোট।
‘উপযুক্ত’ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বাছাই করতে বুধবার (২৫ নভেম্বর) চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভার আহ্বান করে। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, সীতাকুণ্ডের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ পৌর সভার সকল মনোনয়ন প্রত্যাশী উপস্থিত ছিলেন।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বাবলু রাজনীতি সংবাদকে বলেন, সভা শেষে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ১৭ জনের মধ্যে ৯ জন উপযুক্ত মনোনয়ন প্রত্যাশীকে বাছাই করেছেন। আজ (২৬ নভেম্বর) বৃহস্পতিবার তাদের তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের বাছাইকৃত ৯ মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন- বর্তমান মেয়র ও সীতাকুণ্ড পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউল আলম, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম রব্বানী, পৌর কাউন্সিলর মাইমুন উদ্দিন মামুন, পৌর কাউন্সিলর সফিউল আলম চৌধুরী মুরাদ, আওয়ামী লীগ নেতা মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, পৌর কাউন্সিলর জুলফিকার আলী শামীম, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান এবং মোহাম্মদীয়া গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
তালিকা থেকে বাদ পড়া ৮ মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ ইসহাক, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর, পৌর যুবলীগের সভাপতি শাহ কামাল চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা ভুঁইয়া সামি আল মুজতবা, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহেদ চৌধুরী ফারুক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রোটারিয়ান মোহাম্মদ ইউসুফ, আবুল কাশেম ওয়াহেদী এবং সিরাজদৌলা ছুট্টু।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান রাজনীতি সংবাদকে বলেন, সীতাকুণ্ড পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে ১৭ জন আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে আমরা ৯ জনকে বাছাই করেছি। কেন্দ্র এই ৯ জনের মধ্য থেকে প্রার্থী নির্বাচন করবেন।
সীতাকুণ্ডের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ১৭ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় নেতাদের বেছে নেওয়া হয়েছে। বাছাইকৃত তালিকা থেকে কেন্দ্র যাকে উপযুক্ত মনে করে তাকে প্রার্থী করবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ৯ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা অনেকের আছেন। আমরা সে সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের হাতে ছেড়ে দিয়েছি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ৯ মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে এগিয়ে রাখছেন বর্তমান মেয়র ও সীতাকুণ্ড পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউল আলমকে। গত পাঁচ বছরে তার বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ না উঠায় দল আবারো তাকে বেছে নিবেন বলে মনে করছেন তারা। তবে এবার প্রার্থী পরিবর্তনের পক্ষে যুক্তিও দিচ্ছেন অনেক নেতা। তাদের দাবি, এক নেতাকে বারবার মূল্যায়ন না করে অন্য ত্যাগী নেতা যারা আছেন, তাদের মধ্য থেকে এবার প্রার্থী নির্বাচন করা হোক।
বর্তমান মেয়র মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম রাজনীতি সংবাদকে বলেছেন, আমার বিকল্প ১৬ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকতে পারেন, কিন্তু তাদের প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা নেই। আমার কাছাকাছিও কেউ নেই। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে দল আবার আমাকেই বেছে নিবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, মনোনয়ন যুদ্ধে ৯ মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে বদিউল আলমের সাথে লড়াই করার মত সক্ষমতা রয়েছে গোলাম রব্বানীর।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম রব্বানী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, আমি ৪৮ বছর ধরে রাজনীতি করছি। দলের জন্য এতো ত্যাগ স্বীকার করলাম কিন্তু কোনো কিছু পাইনি। আমি মনে করি, দল এবার আমাকে মূল্যায়ন করবে।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান মেয়র পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে থাকলেও গত পাঁচ বছরে দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন না। দলের জন্য তার কোনো ত্যাগ নেই।
বিএনপিতে মনোনয়ন লড়াইয়ে ২
আওয়ামী লীগে মনোনয়ন প্রত্যাশীর জট থাকলেও বিএনপির মনোনয়নের লড়াইয়ে আছেন মাত্র দুই জন। এরা হলেন- পৌর বিএনপির সদস্য আবুল মনসুর ও পৌর বিএনপির সভাপতি ইউসুফ নেজামী।
আবুল মনসুর গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। পৌর বিএনপির সভাপতি ইউসুফ নেজামী গত নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তারা দুজনই বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর অনুসারী।
উপজেলা বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, আবুল মনসুর গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচন নিয়ে তার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাই এবারের নির্বাচনে মনোনয়নের লড়াইয়ে ইউসুফ নেজামীর চেয়ে তিনি এগিয়ে থাকবেন।
মুক্তিযোদ্ধা আবুল মনসুর দাবি করেছেন, বিএনপির হাইকমান্ড থেকে তাকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। ইউসুফ নেজামী দাবি করছেন, পৌর বিএনপির সভাপতি হিসেবে দল এবার তাকে মূল্যায়ন করবেন।
৭৩ বছর বয়সী আবুল মনসুর রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ইতোমধ্যে দলের উচ্চ পর্যায় থেকে আমি সবুজ সংকতে পেয়ে গেছি। আমাকে মানসিকভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত নির্বাচনে সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে আমি ২৯৪২ ভোট পেয়েছিলাম। যদি সারাদিন ভোটের মাঠে থাকতাম তাহলে তো বন্যা বয়ে যেতো। কিন্তু আমাকে তো প্রতিপক্ষ ভোটের মাঠে থাকতে দেয়নি। তবে এবার প্রার্থী হলে সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ভোটের মাঠে থাকবো।
ইউসুফ নেজামী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, আমি ইতোমধ্যে দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। আমি যেহেতু এখন পৌর বিএনপির সভাপতি, তাই আশা করছি দল এবার আমাকে অগ্রাধিকার দিবে।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন দলের দুঃসময়। তাই বিবাদ চাই না। দল আমাকে মনোনয়ন না দিলে কোনো আপত্তি থাকবে না। যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষে কাজ করবো।