করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রামেকে দালালদের দৌরাত্ম্য কমছে না। তাদের দৌরাত্ম্যে চিকিৎসা নিতে আসা রোগিরা যেমন বিপাকে পড়ছেন; তেমনি কখনো কখনো চিকিৎসকরাও এদের অপতৎপরতার শিকার হচ্ছেন। দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগিরা দালালের খপ্পরে পড়ছেন বেশি। ভয়-ভীতি দেখানোসহ বিভিন্ন কৌশলে এসব রোগিদের সরলতার সুযোগ নিচ্ছে এই বেপরোয়া দালালচক্র। এমন পরিস্থিতিতে সিসিটিভি স্থাপনের মাধ্যমে দালালদের চিহ্নিত করে কার্যকর মনিটরিংয়ের দাবি সাধারণ রোগিদের। এছাড়া দালালদের স্থায়ীভাবে দমনে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার (১৮ নভেম্বর) দালালদের অপতৎপরতা রুখতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ১৮ দালালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। হাসপাতালের বহির্র্বিভাগ ও জরুরি বিভাগের সামনে থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তিনজন নারীও ছিলেন। রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল হাসপাতালে এ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
এই অভিযানের পরও করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগের পুরো এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দালালরা। ওয়ার্ডগুলোর সামনে রোগি ও তার স্বজনরা বের হলেই ব্যবস্থাপত্র দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে তারা। ব্যবস্থাপত্র নিয়ে কয়েকজন দালাল টানাটানি করেন। ব্যবস্থাপত্র দেখাতে অস্বীকৃতি জানালে অশালীন মন্তব্যসহ গালিগালাজ করতেও দেখা যায়। অথচ রোগিদের এমন বিড়ম্বনায় পাশেই দাঁড়িয়ে দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাচ্ছেন কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা। বৃহস্পতিবার ও রোববার সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
রোগিদের অভিযোগ, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগিদের চাউনি দেখে অশিক্ষিত ও বৃদ্ধদের টার্গেট করছে দালালচক্র। রোগি ও স্বজনদের অস্থির দেখলেই দালালরা তার পিছু নিচ্ছে। রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা হয় না বা টেস্ট করা হয় নাÑএমন ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত করে তাদের বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিচ্ছে দালালরা। কেউ প্রতিবাদ করলেই তার উপরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে, গালিগালাজ করে। দালালরা সঙ্গবদ্ধ দালালদের ভয়ে থাকতে হয় সাধারণ রোগিদের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই দালালরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে- এমনটাই মনে করেন রোগিরা।
এ বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল আলম বাদশা জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে দালালমুক্ত করতে কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার ও সক্ষমতার অভাব রয়েছে। দালালদের মাদদদাতা হিসেবে বেসরকারি অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক যেমন আছেন। তেমনি রামেকের চিকিৎসা ব্যবস্থায় কিছু অসামঞ্জস্যতাও আছে। এ কারণে তৃতীয় পক্ষ তৈরি হচ্ছে। আর এভাবেই বিভিন্ন কৌশলে দালালরা ডালপালা মেলছে। আর এই অসামঞ্জস্যতা তৈরির ক্ষেত্রে হাসপাতালের অবকাঠামো সংকট ও জনবল সংকটসহ বেশকিছু বিষয় আছে। যেগুলো ঠিক থাকলে হাসপাতাল দালালমুক্ত হয়ে যাবে।
তিনি আরো জানান, দালালরা যে শুধু রোগিদের প্রতারণা করছে এমনটা নয়। এদের সঙ্গবদ্ধ অপতৎপরতার শিকার চিকিৎসকরাও হচ্ছেন। সর্বোপরি হাসপাতালের পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থায় এর প্রভাব পড়ছে।
আইনের কঠোর প্রয়োগ না থাকায় দালালদের দমন করা যাচ্ছে না দাবি করে রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দালালদের অপতৎপরতা রুখতে মাঝে মধ্যেই অভিযান চালিয়ে তাদের ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেন। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে কিছুদিন পর জামিনে তারা ঠিকই বেরিয়ে আসে। তারা আবার দালালি শুরু করে। আইন তাদের পক্ষে শিথিল কি না বুঝি না! এখন স্থায়ীভাবে হাসপাতালকে দালালমুক্ত কীভাবে করা যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে।
তিনি জানান, হাসপাতালে দালালদের উৎপাত রোধে খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাসপাতালে সেবা মানোন্নয়নের লক্ষে কয়েকদিনের মধ্যে সব ডাক্তারদের সঙ্গে বসে একটা মিটিং করবো। হাসপাতালে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে দালালদের ধরা হবে। এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলাবাহীনির সঙ্গেও কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, রামেক হাসপাতালে ৭৫ টা সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। আউটডোরে লাগানো হয়েছে ২৫ টা। এগুলোর মাধ্যমে খুব দ্রুতই দালাল চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র: সোনার দেশ