রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৮ নভেম্বর, ২০২০ ৮:৩৯ : অপরাহ্ণ
করোনাভাইরাসে বিধ্বস্ত পৃথিবী। এ মহামারীর ১১ মাস পূর্ণ হওয়ার পথে বিশ্ব। প্রথম ধাপের ভাইরাসের ভয়াবহতা শেষে ফিরে এসেছে দ্বিতীয় ধাপ। আগের চেয়েও দ্বিগুণ ভয়াবহতা নিয়ে আঘাত করে চলেছে কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস।
একমাত্র ভ্যাকসিনই এ মহামারীকে ঠেকাতে পারে। তাই বিশ্বের বহু দেশে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে। তবে এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠান মডার্না ও ফাইজার সবচেয়ে এগিয়ে। দুই প্রতিষ্ঠানই দাবি করেছে তাদের ভ্যাকসিন ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকরী। তারা এখন সেই ভ্যাকসিন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে ঠিক কবে প্রস্তুত হবে এই ভ্যাকসিন?
যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক ওষুধ তৈরির কোম্পানি মডার্না ইনকর্পোরেশন দাবি করেছে, তাদের তৈরি করোনা ভ্যাকসিন মহামারী ঠেকাতে প্রায় ৯৫ শতাংশ কার্যকরী। চার সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৩০ হাজার করোনা রোগীর দেহে ভ্যাকসিন পরীক্ষা চালানো হয়। ফলাফলে দেখা যায়, ভ্যাকসিনটি ৯৪.৫ শতাংশ কার্যকরী।
মডার্না ছাড়াও অনুমোদনের পথে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও জার্মান প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেকের যৌথ উদ্যোগে তৈরি ভ্যাকসিন। তাদের ভ্যাকসিনের ৯০ শতাংশের বেশি সুরক্ষা দিতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে।
তবে আশঙ্কার কথা হলো ফাইজার তাদের তৈরি করোনা ভ্যাকসিন পরীক্ষায় ইতিবাচক ফলাফল দেখানোর মাত্র দুইদিনের মধ্যেই সেটির ৮০ শতাংশের বেশি ডোজ অগ্রিম কিনে নিয়েছে বিশ্বের ধনী দেশগুলো। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের করোনা ক্যাম্পেইনাররা এই তথ্য জানিয়েছেন।
উৎপাদনের আগেই এভাবে বিক্রি হয়ে যাওয়ায় মূলত গরীব দেশগুলোর জন্য এই ভ্যাকসিন পাওয়ার আর কোনও উপায় রইল না। যার ফলে, বিশ্বব্যাপী ৮৫ শতাংশেরও বেশি মানুষ এই ভ্যাকসিন প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে। ফাইজার তাদের ভ্যাকসিনের প্রথম আনুষ্ঠানিক পর্যালোচনায় জানিয়েছে, আগে কখনও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি এমন মানুষদের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ ক্ষমতা ৯০ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। ২০২১ সাল শেষ হওয়ার আগেই এই ভ্যাকসিনের ১৩৫ কোটি ডোজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তাদের। এর মধ্যে মোট উৎপাদনের ৮২ শতাংশ বা ১০০ কোটিরও বেশি এই ডোজ ইতিমধ্যে ধনী দেশগুলো কিনে নিয়েছে।
ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ১০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কিনে নিয়েছে। তারা আরও ৫০ কোটি ডোজ বৃকিং দিয়ে রেখেছে। এই পরিমাণ ভ্যাকসিন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত নাগরিককে করোনা প্রতিরোধে টিকা দেয়া হয়ে যাওয়ার পরেও লাখ লাখ ডোজ বাকি থেকে যাবে। সোমবার অবধি ফাইজার ব্রিটেনের কাছে ৪ কোটি এবং ইইউ’র কাছে ২০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন বিক্রি করেছে। ইউরোপের জন্য আরও ১০ কোটি ডোজের বুকিং রাখা হয়েছে। এক বিবৃতিতে ব্রিটেনের করোনা ক্যাম্পেইন গ্রুপ গ্লোবাল জাস্টিস নাও উল্লেখ করেছে যে, ভ্যাকসিন উন্নয়নে ফাইজারের অংশীদার, জার্মানীর প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক তাদের সরকারের কাছ থেকে ৮৮ কোটি ১০ লাখ ও ইউরোপীয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের কাছ থেকে ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে।
এ বিষয়ে গ্লোবাল জাস্টিস নাও এর পরিচালক নিক দেদারিন বলেন, ‘ফাইজার দাবি করে যে, তারা কোনও রাষ্ট্রীয় সমর্থন গ্রহণ করেনি। তবে উৎপাদনের আগেই ১০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন অগ্রিম বিক্রি, ট্যাক্সের বিষয়টি উল্লেখ না করা এবং ফাইজারের অংশীদারের প্রত্যক্ষ পাবলিক ফান্ডিং থেকে বোঝা যায় যে, তাদের দাবীটি সর্বোপরি বিভ্রান্তিকর।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ওষুধের উপর এই বিশাল কর্পোরেশনগুলোর জোট যতদিন ভাঙতে না পারি, ততদিন এই অন্যায় অব্যাহত থাকবে।’
গ্লোবাল জাস্টিস উল্লেখ করেছে যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের গ্লোবাল অ্যাক্সেস সুবিধা (কোভ্যাক্স) এর আওতায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ফাইজারের কিছু ডোজ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এই ডোজগুলো ফাইজারের মোট উৎপাদিত ভ্যাকসিনের তুলনায় খুবই সামান্য। এই কারণে শত কোটি মানুষ ভ্যাকসিন পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি ধনী দেশ সবার আগে ভ্যাকসিন পাওয়া নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে ভ্যাকসিনের সমবন্টন নিশ্চিতে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টায় অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে। এখন তারাই অন্যদেরকে বঞ্চিত করে বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিন কিনে নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গ্লোবাল জাস্টিস চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে গ্লোবাল পেটেন্ট বিধি স্থগিত করার জন্য আবারও আহ্বান জানিয়েছে যাতে দরিদ্র দেশগুলো ফাইজারের ভ্যাকসিনের জেনেরিক সংস্করণ উৎপাদন করতে পারে। গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত ভ্যাকসিন এবং চিকিৎসা সামগ্রীর সাথে সম্পর্কিত বিধিগুলো স্থগিত করার প্রস্তাব দিয়েছিল।