চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব কে হবেন তা নিয়ে কৌতূহল দেখা দিয়েছে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। সদস্য সচিব পদে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এসএম সাইফুল আলমের নাম দলের ভেতরে আলোচনা হচ্ছে।
জানা গেছে, নগর বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ ২৭৫ সদস্যের ঢাউস কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত ৯ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে স্কাইপের মাধ্যমে সাক্ষাত করে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। চলতি মাসে আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা আসতে পারে বলে দলীয় সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।
ওই সাক্ষাতে নগর বিএনপির অধিকাংশ নেতা আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি হিসেবে সংগঠনের বর্তমান কমিটির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের নাম তারেক রহমানের কাছে প্রস্তাব করেছেন। আর সদস্য সচিব হিসেবে সংগঠনের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের পাশাপাশি সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এসএম সাইফুল আলমের নামও প্রস্তাব করেছেন নেতারা।
সাক্ষাতে অংশ নেওয়া নগর বিএনপির পাঁচজন নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারেক রহমান অনেকের কাছে সদস্য সচিব পদে সাইফুল আলমের ব্যাপারে মতামত জানতে চেয়েছেন। তবে আহ্বায়ক হিসেবে অধিকাংশ নেতা তারেক রহমানের কাছে ডা. শাহাদাত হোসেনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেছেন।
বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে জানিয়েছেন, আহ্বায়ক হিসেবে ডা. শাহাদাতের নাম অনেকটা চূড়ান্ত। তাঁর ব্যাপারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মনোভাব ইতিবাচক। কিন্তু সদস্য সচিব পদে কারো নাম নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ রাজনীতি সংবাদকে জানান, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচন করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি নগর বিএনপির নেতৃবৃন্দের সাথে স্কাইপে সাক্ষাত করলেও নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে আরও খোঁজ খবর নিবেন।
আহ্বায়ক পদে ডা. শাহাদাতের বিকল্প না থাকায় এ নিয়ে নেতাকর্মীদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। নেতাকর্মীদের কৌতূহল সদস্য সচিব কে হচ্ছেন তা নিয়ে।
নগর বিএনপির অনেক নেতা মনে করছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সদস্য সচিব পদে সাইফুল আলমের ব্যাপারে মতামত জানতে চাওয়ার বিষয়টা পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। সাংগঠনিক দক্ষতা ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কারণে সাইফুলের ব্যাপারে তারেক রহমান ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাথে সাইফুল আলমের ব্যক্তিগত পরিচয় রয়েছে। সাইফুল আলম ১৯৯৪ সালে জিয়া শিশু-কিশোর সংগঠনের চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এ কারণে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান তাঁকে স্নেহ করে ‘শিশু সাইফুল’ বলে ডাকেন।
নগর বিএনপি নেতাদের অনেকে মনে করেন, সাংগঠনিক দক্ষতা ও যোগ্যতার দিক দিয়ে সাইফুল আলমের চেয়ে আবুল হাশেম বক্কর এগিয়ে আছেন। দলের আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে তিনি একাধিক মামলার আসামি হয়েছেন, জেলও কেটেছেন।
আবুল হাশেম বক্কর সদস্য সচিব পদে নিজেকে যোগ্য দাবি করে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক পদে গত ৩ বছরে আমি সফলতার পরিচয় দিয়েছি। ১০০ ভাগ না হলেও ৮০ ভাগ সফল হয়েছি। আমি আশাবাদী, দলের হাইকমান্ড সদস্য সচিব পদেও আমাকে বেচে নিবেন।’
নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, ‘দলের আন্দোলন-সংগ্রামে আমারও অনেক অবদান রয়েছে। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে দলের আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। জেলও কেটেছি। আমি মনে করি, দলের হাইকমান্ড সবকিছু বিবেচনা করে সদস্য সচিব নির্বাচন করবেন।’
নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আবুল হাশেম বক্কর তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতা। দীর্ঘ দিন নগর যুবদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলের আন্দোলন-সংগ্রামে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে, কয়েকবার জেলও কেটেছেন। এই বিবেচনায় সাইফুলের চেয়ে তিনি অবশ্যই এগিয়ে আছেন।’
প্রসঙ্গত, ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করের নেতৃত্বে নগর বিএনপির ২৭৫ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়েছিল ২০১৭ সালের ৯ জুলাই। দুই বছরের জন্য অনুমোদিত এই কমিটির মেয়াদ ১ বছর আগে পেরিয়ে গেছে।