রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩:৪৬ অপরাহ্ণ
ভারতের ব্যাপারে ‘নতজানু’ পররাষ্ট্রনীতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যরা।
ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা এবং জাতীয় পতাকা অবমাননা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি ‘হুমকি’ মনে করে সরকারকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর রাওয়া কমপ্লেক্সের পাশে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে তারা এই আহ্বান জানান। ‘ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান’ জানিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যরা এ সমাবেশের আয়োজন করেন।
সনাতনী হিন্দু মহাজোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে ভারতে, বিশেষ করে বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্যগুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে।
গত সোমবার এমন একটি বিক্ষোভ থেকে ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালানো হয়। পরে তারা সেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলে বলে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। ঘটনাটিকে ‘দুঃখজনক’ বলে বর্ণনা করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ ঘটনাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ মন্তব্য করে ‘ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া’ জানিয়েছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সব কূটনৈতিক মিশন ও সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা।
গত মঙ্গলবার ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদপত্র তুলে দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর আগে কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনের সামনের বিক্ষোভে জাতীয় পতাকা পোড়ানো এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়।
এ নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ‘ভারতীয় আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যদের আয়োজিত এই প্রতিবাদ সমাবেশে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মোহাম্মদ আহসানুল্লাহ বলেন, ‘হজরত শাহজালাল, হজরত শাহ মখদুম, অতীশ দীপঙ্কর, শী চৈতন্য, অনুকূল ঠাকুর, লোকনাথ ব্রহ্মচারী প্রমুখের আবাসভূমি এই বাংলাদেশ। আমরা যুগ যুগ ধরে এই শ্যামলভূমিতে সম্প্রীতির সাথে বসবাস করে আসছি। কিন্তু অতি উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সম্প্রতি বাংলাদেশের লেডি ফেরাউন পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারতের হিন্দু নেতৃত্বের শ্যেন দৃষ্টি পড়েছে আমাদের দিকে। তাদের ইদানীংকালের কর্মকাণ্ড এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে।’
তিনি বলেন, ‘তাদের সর্বশেষ উদ্যোগ ছিল আগরতলা এবং কলকাতার বাংলাদেশি দূতাবাসে আক্রমণ চালানো এবং আমাদের বাংলাদেশের পতাকাকে অবমাননা করা। আমরা এই সমস্ত ঘটনাগুলোকে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্ভভৌমত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে মনে করছি। এ ছাড়া ভারতের কিছু মিডিয়া ও রাজনৈতিক নেতারা বাংলাদেশকে নিয়ে সার্বক্ষনিক বিশেদগার করে চলেছে।’
অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আহসানুল্লাহ বলেন, ‘ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী যে কোন দূতাবাসে হামলা মানে সেই দেশের সার্বভৌমত্ব এলাকার উপরে হামলা। দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে যখন আমাদের সার্বভৌমত্বের উপরে হামলায় হয়, আমাদের পতাকা পদদলিত হয়, তখন আমরা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা চুপ করে থাকতে পারি না।’
কর্মজীবনের শুরুতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শপথ থেকে এখনো তারা ‘বিচ্যুত’ হননি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে জাতিকে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। আসুন সবধরনের রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে গিয়ে, ধর্ম-মত ও দলের ঊর্দ্ধে উঠে আমরা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করি।’
এ ক্ষেত্রে দেশের তরুণ ছাত্র এবং শ্রমক জনতাকে অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে হবে মন্তব্য করে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আহসানুল্লাহ বলেন, আপনাদের আরও আশ্বস্ত করতে চাই সশস্ত্র বাহিনীর লাখ লাখ প্রশিক্ষিত সৈনিক, হাজার হাজার প্রশিক্ষিত অফিসার সবসময় এদেশের জনগনের পাশে ছিলাম, আমরা থাকবো। আমরা যে কোন প্রয়োজনে দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আভ্যন্তরীন, আন্তর্জাতিকসহ যে কোন ধরনের ষড়যন্ত্র হবে আমরা আপনাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সেই ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে চাই।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিনেও সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যদের ভূমিকা তুলে ধরে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনীষ দেওয়ান বলেন, ‘আজ আবার এখানে জমায়েত হয়েছি ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম জারি রাখার জন্য।’
ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারকে ‘বার্তা দিয়ে’ তিনি বলেন, ‘মোদিজি, অমিতজি এবং রাজনাথজি, আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যেটা দেখেছেন ৭২ সালের সেই সেনাবাহিনী এখন আর নাই। আমরা এখন যে কোন শত্রু মোকাবেলায় প্রস্তুত। আপনারা আর আস্ফালন তুলবেন না, ভয় দেখাবেন না। আমরা শুধু সশস্ত্র বাহিনী নই, ১৭ কোটি জনতা আছে আমাদের সঙ্গে আপনাদের সীমান্তেই রুখে দিতে।’
সমাবেশ সঞ্চালনার সময় সরকারের উদ্দেশ্যে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল লুৎফুল হক বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সব জাতীয় চুক্তিগুলো তুলে ধরুন। যেসব ভারতীয়রা বাংলাদেশে আছে, সেগুলো পুনর্বিবেচনা করে প্রয়োজন না থাকলে তাদের ফেরত পাঠানো হোক। যেসব ভারতীয় মিডিয়া সরকারের বিরুদ্ধে বিশেদগার করছে দেশে সেগুলো বাতিল করা হোক।’
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিনে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যদের ভূমিকা তুলে ধরে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনীষ দেওয়ান বলেন, আজ পুনরায় আবার এখানে জমায়েত হয়েছি ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম জারি রাখার জন্য।
ভারত সরকারকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, মোদিজি, অমিতজি এবং রাজনাথজি, আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যেটা দেখেছেন, ৭২ সালের সেই সেনাবাহিনী এখন আর নাই। আমরা এখন যে কোনো শত্রু মোকাবেলায় প্রস্তুত। আপনারা আর আস্ফালন তুলবেন না, ভয় দেখাবেন না। আমরা শুধু সশস্ত্র বাহিনী নই, ১৭ কোটি জনতা আছে আমাদের সাথে আপনাদের সীমান্তেই রুখে দিতে।
সমাবেশ সঞ্চালনার সময় সরকারের উদ্দেশে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল লুৎফুল হক বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সব জাতীয় চুক্তি তুলে ধরুন। যেসব ভারতীয় বাংলাদেশে আছে, সেগুলো পুনর্বিবেচনা করে প্রয়োজন না থাকলে তাদের ফেরত পাঠানো হোক। যেসব ভারতীয় মিডিয়া সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে, দেশে সেগুলো বাতিল করা হোক।
সমাবেশ শেষে বিভিন্ন বাহিনীর সাবেক সদস্যসহ পাঁচ শতাধিক মানুষের অংশগ্রহণে একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি রাওয়া ক্লাব থেকে শুরু হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সংলগ্ন ক্রসিং হয়ে ঘুরে আবার রাওয়া ক্লাবে এসে শেষ হয়।
আরও পড়ুন: হিন্দুত্ববাদী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, ভারতীয়দের উদ্দেশে ১৪৫ নাগরিক