রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশের সময় :২৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫:১৮ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রামে আদালত চত্বরে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনার ৫২ সেকেন্ডের ভিডিও পুলিশের হাতে এসেছে। এই ভিডিও থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
পুলিশের উদ্ধার করা ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা একজন ব্যক্তি রাস্তায় পড়ে আছেন। আশপাশে ২৫-৩০ জন যুবক দাঁড়িয়ে রয়েছে। এদের মধ্যে এক যুবকের পরনে কমলা রঙের গেঞ্জি, কালো প্যান্ট এবং মাথায় ছাই রঙের হেলমেট। হেলমেটধারী যুবকটি হাতে থাকা কিরিচ দিয়ে পড়ে থাকা ব্যক্তিকে (আইনজীবী সাইফুল) একের পর এক আঘাত করছেন। একই সঙ্গে আরও তিন-চারজন তাকে মারধর করছেন।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপান ওম দাশ, চন্দন ও রনব। সাইফুলের নিথর দেহ রাস্তায় পড়ে থাকলেও লাঠিসোঁটা দিয়ে পেটাতে থাকেন অন্যরা। ঘটনাস্থলে আরও ২৫-৩০ জন উপস্থিত ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে রমিত দাস, সুমিত দাস, গগন দাস, নয়ন দাস, বিশাল দাস, আমান দাস, মনু মেথর ও রাজীব ভট্টাচার্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের বেশির ভাগই পরিচ্ছন্নতাকর্মী, আর একজন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।
এ ঘটনার পর থেকে সেবক কলোনির অধিকাংশ বাসিন্দা ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখানে কিছু মানুষকে দেখা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনার সঙ্গে কয়েকজন জড়িত থাকলেও পুরো কলোনি বিপদে পড়েছে। তারা দাবি করেন, নিরীহ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী তারেক আজিজ বলেন, ‘পুলিশ সর্বোচ্চ পেশাদারি ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। দায়িত্বে কারও গাফিলতি ছিল না।’
প্রসঙ্গত, গত ২৫ নভেম্বর বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) নেতা চিম্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরদিন তাকে চট্টগ্রাম আদালতে নেওয়া হয়। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। জামিন না দেওয়ার জের ধরে সেখানে বিক্ষোভ করেন ইসকনের সমর্থকরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় তারা। সংঘর্ষ চলাকালে আদালত এলাকায় মসজিদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় তারা।
একপর্যায়ে বিকেলে আদালতের প্রধান ফটকের বিপরীতে রঙ্গম কনভেনশন হলের গলিতে একদল ইসকন অনুসারীর হাতে খুন হন অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ইসকনের অনুসারীরা আদালত এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা শুরু করলে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ তাদের বাধা দেন। এরপর তাকে তুলে নিয়ে আদালতের প্রধান ফটকের বিপরীতে রঙ্গম টাওয়ারের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সাইফুলকে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় সাইফুলকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আলিফ হত্যার ঘটনায় নগরীর কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে।
আলিফ সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের জালাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০১৮ সালে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। পরে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবেও নিবন্ধন পান।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা: ডিসি-ওসিকে বদলি