চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডা. শাহাদাত হোসেন। তাকে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
আজ রোববার সকালে সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে চসিক মেয়রের এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
আগামী ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম ফিরে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন সিটি করপোরেশনের নতুন এই মেয়র।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জানান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর না থাকায় ১৭ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে, যারা নতুন মেয়রের সঙ্গে চট্টগ্রামের উন্নয়নে কাজ করবেন।
এর আগে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টা হাসান আরিফ চসিক মেয়রকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ডা. শাহাদাত হোসেন বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশের একটি প্রধান নগরীর মেয়র হয়েছেন। ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের শিক্ষাকে বুকে ধারণ করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবেন, এটাই তার কাছে প্রত্যাশা করি। আমরা গ্রিন চট্টগ্রাম দেখতে চাই। জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম দেখতে চাই। ক্লিন সিটি হিসেবে নগরবাসীরও একই প্রত্যাশা।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এই উপদেষ্টা বলেন, পেছনের সব ধ্যান-ধারণা, চিন্তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ছাত্র-জনতা-শ্রমিকদের যে অর্জনের জন্য তাদের আত্মত্যাগ রয়েছে, সে প্রত্যাশা পূরণের জন্য বৈষম্যহীন শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় মেয়র শাহাদাত হোসেনের কাছে দেখতে চাই। আমি মনে করি, এ প্রত্যাশা চট্টগ্রামের প্রতিটি নাগরিকের। আমাদের প্রত্যাশা বৈষম্যহীন বাংলাদেশের।
শপথ নিয়ে শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে। যদি চট্টগ্রাম শহরের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপ করা যায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি। গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি, হেলদি সিটি- এসব আমার নির্বাচনী ইশতেহার। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের সময় হামলা, গোলাগুলি, প্রাণহানি ও ক্ষমতাসীনদের শক্তি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটে। এতে ভোটের উৎসব অনেকটা ম্লান হয়ে যায়। ভোটগ্রহণ শেষে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৭৫৯ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
নির্বাচনে রেজাউলের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মেয়রপ্রার্থী শাহাদাত হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়েছেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
জানা গেছে, ডা. শাহাদাত হোসেন তৎকালীন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামানের কাছে প্রতিটি কেন্দ্রের ভোটের ফলাফলের ইভিএমের প্রিন্ট করা কপি চান। কিন্তু তিনি ডা. শাহাদাতকে ফলাফলের প্রিন্ট কপি দেননি।
এরপর ডা. শাহাদাত আদালতের দ্বারস্থ হন। ভোটে কারচুপির অভিযোগ এনে ফলাফল বাতিল চেয়ে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা ঠুকে দেন। মামলায় তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা ও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিমসহ ৯ জনকে বিবাদী করা হয়।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর থেকে চসিক কর্মকর্তারা রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছিলেন। এ থেকে বোঝা যায়, নির্বাচনের নামে ওইদিন শুধু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। কোনো কেন্দ্র থেকে ইভিএমের ফলাফলের প্রিন্ট কপি দেওয়া হয়নি। ভোটের দিন দুপুর পর্যন্ত ৪ থেকে ৬ শতাংশ ভোট পড়ে। কিন্তু ভোটের হিসাবে দেখানো হয়, ২২ শতাংশ ভোট পড়েছে।
মামলার এজাহারে ডা. শাহাদাত আরও অভিযোগ করেন, তিনটি ভোটকেন্দ্রে তার শূন্য ভোট দেখানো হলেও তিনদিন পর ২৮টি কেন্দ্রে শূন্য ভোট দেখানো হয়, যা অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয়।
নির্বাচনের সাড়ে তিন বছর পর গত ১ অক্টোবর এ মামলার রায়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে নির্বাচিত ঘোষণা বাতিল করে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে চট্টগ্রামের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল। এরপর গত ৮ অক্টোবর ডা. শাহাদাত হোসেনকে সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর স্থলাভিষিক্ত করে সংশোধনী গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
আরও পড়ুন: প্রশাসক হওয়ার ‘প্রস্তাব ফিরিয়ে’ মেয়রের চেয়ারে বসছেন ডা. শাহাদাত