রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :২৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১০:৩০ : পূর্বাহ্ণ
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের মাধ্যমে দেশে কোনো সাংবিধানিক সংকট ও শূন্যতা তৈরি হলে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিএনপি। আর এ কারণে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চায় না দলটি।
রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে, শূন্যতা তৈরি হবে। তাই তারা চায় সংস্কার ও দ্রুত নির্বাচন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দিক থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি ওঠার পর গত ২৩ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।
প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাতের পর তাদের পক্ষে নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, দেশে যাতে নতুন করে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি না হয় সেজন্য খেয়াল রাখতে বলেছি। আমরা কোনো সাংবিধানিক সংকট চাই না। পতিত স্বৈরাচারের দোসররা যদি কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে আমরা গণতন্ত্রকামীরা তা প্রতিহত করবো।
বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আরেক ব্রিফিংয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা এই মূহুর্তে রাষ্ট্রীয় সংকট সৃষ্টি করবে। সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি করবে। যেটা জাতির কাম্য নয়৷ এই সংকটের কারণে যদি জাতির গণতন্ত্রে উত্তরণ বিলম্বিত হয় বা বাধাগ্রস্ত হয়, সেটা জাতির কাম্য নয়।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ প্রসঙ্গে একটি পত্রিকায় রাষ্ট্রপতির বক্তব্য নিয়ে যে বিতর্ক হয়েছে তা একটি সেটেলড ম্যাটার। বঙ্গভবন থেকে বিবৃতি দিয়েও তা বলা হয়েছে। তারপর এটা নিয়ে আর বিতর্ক থাকে না। সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্সে তার পদত্যাগের কথা বলা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেছেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা মনে করি, রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে সাংবিধানিক শূন্যতা ও রাষ্ট্রীয় সংকট তৈরি হলে তৃতীয় পক্ষ বা অন্য কোনো পক্ষের দুরভিসন্ধি কাজ করবে কিনা। সেইরকম রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক সংকটের মুখোমুখি আমরা হতে চাই না। আমরা চাই গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে অন্য কোনো কিছু যেন বাধা না হয়। আমরা চাই গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং নির্বাচন, এর মাঝে আর কোনো কিছু যেন বাধা না হয়। এটা জাতির জন্য কল্যাণকর হবে না।
আর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আর সব অপকর্ম বাদ দিলেও ছাত্রলীগ জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর সশস্ত্র আক্রমণ করেছে, ভারি অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করেছে। আর আওয়ামী লীগ শাসনামলে ছাত্রলীগ ছিল একটা আতঙ্কের নাম। ছাত্র-জনতার দাবি ছিল তাদের নিষিদ্ধ করার। সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার সঙ্গে আমরা একমত।
আওয়ামী লীগ প্রশ্নে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের গণহত্যার বিচার শুরু হয়েছে। আইনেও কিছু সংশোধন আসবে৷ সেখানে দলেরও বিচার হবে। দল নিষিদ্ধেরও বিষয় থাকবে কিনা সেটা বিচার শেষ হলে দেখা যাবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হারুনুর রশীদ বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতিকে স্বপদে বাহাল রাখায় কোনো সংকট দেখছি না। বরং আমার দল মনে করে, তিনি পদত্যাগ করলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। কারণ, স্পিকার পদত্যাগ করেছেন। ডেপুটি স্পিকার কারাগারে। সংসদ নেই। তাহলে তিনি কোথায় পদত্যাগ করবেন? তিনি পদত্যাগ করলে সংকট হবে।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি জাতীয় ঐক্য হয়েছে। এখন রাষ্ট্রপতির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা সব রাজনৈতিক দলসহ সব পক্ষের সঙ্গে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতেই করতে হবে। এর বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। আর এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছায় সরে যেতে চাননি, বলেন তিনি।
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করা বা না করা প্রসঙ্গে আমি কিছু বলবো না। তবে ১৫ বছর ধরে তারা হত্যাসহ যেসব অপরাধমূলক কাজ করেছে, আগে তার বিচার হওয়া দরকার। দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আমাদের তিন সিনিয়র নেতা রাষ্ট্রপতির ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টাকে যে মতামত দিয়েছেন, সেটা আমাদের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের মতামত। আমার আলাদা কোনো মতামত নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বিএনপি নেতা বলেন, সাংবিধানিক সংকট তৈরি হলে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিতে পারে। আর সেটা হলে নির্বাচন ও সংস্কার শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যেতে পারে। সাংবিধানিক সংকট হয়- এমন কোনো কাজের বিরোধী বিএনপি। তাই বিএনপি বর্তমান রাষ্ট্রপতিকেই তার পদে রাখতে চায়। সেটাই আমাদের জন্য নিরাপদ।
শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার প্রায় তিন মাস পর বাংলাদেশের একটি পত্রিকায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেখ হাসিনার লিখিত পদত্যাগপত্র না পাওয়ার কথা বললে সোমবার আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে শপথ ভঙ্গের অভিযোগ তোলেন।
তারপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা রাষ্ট্রপতিকে ফ্যাসিবাদের দোসর বলে তার পদত্যাগ দাবি করেন। তার পদত্যাগের দাবিতে গত ২২ অক্টোবর শহীদ মিনারে সমাবেশ ও বঙ্গভবন ঘেরাও করা হয়। রাষ্ট্রপতিকে পদ ছাড়তে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছিল তখন।
তবে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতির পদে মো. সাহাবুদ্দিনের থাকা না থাকার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।
বৈঠকের পর বন, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সংবাদমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ নিয়ে যা বললেন তথ্য উপদেষ্টা