শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আন্তর্জাতিক

শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট হলেন বামপন্থি দিসানায়েকে


শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমার দিসানায়েকে

রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ৯:২৪ : অপরাহ্ণ

শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন বামপন্থি রাজনীতিক অনুরা কুমার দিসানায়েকে। আজ রোববার সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দফায় ভোট গণনা শেষে দেশটির নির্বাচন কমিশন তাকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে এবারও শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছেন।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ারের (এনপিপি) নেতা ও বামপন্থী রাজনীতিক অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দল সঙ্গী জন বালাওয়াগার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা পেয়েছেন ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট। মাত্র ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয় শনিবার। আজ প্রথম দফা ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, একজন প্রার্থীও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। এরপর দ্বিতীয় দফায় ভোট গণনা করে রাতে নির্বাচন কমিশন ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) জোটের নেতা অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকেকে বিজয়ী ঘোষণা করে।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা আসার পর এনপিপি জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামীকাল সোমবার সকালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। প্রেসিডেন্ট সচিবালয়ে তার শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানটি হবে অনাড়ম্বর।

খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধসহ নিত্যপণ্যের তীব্র সংকটের প্রতিবাদে ২০২২ সালে সড়কে নামেন শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ। প্রবল জন–অসন্তোষের মুখে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ গণআন্দোলনে রূপ নেয়। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ হাজারো মানুষ ঢুকে পড়েন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাসভবনে। গোতাবায়া দেশ ছেড়ে পালান। এরপর রণিল বিক্রমাসিংহকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে দেশটির সংসদ।

 

জনতা বিমুক্তি পেরামুনার (জেভিপি) প্রধান অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে এবারের নির্বাচনে এনপিপি জোটের প্রার্থী ছিলেন। এই জোট এর আগে কখনো শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলও ছিল না। দেশটির ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টে এই জোটের আসন ছিল মাত্র তিনটি।

গণবিক্ষোভের মুখে গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশ ছেড়ে পালানোর পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জেভিপির জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। সেই গণবিক্ষোভে সক্রিয়া ভূমিকা ছিল দলটির। আন্দোলনের পর জেভিপি বৃহত্তর পরিবর্তনের ডাক দেয়। সামাজিক ন্যায়বিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলটির অনড় অবস্থান নাগরিকদের আকৃষ্ট করেছে। দলের সঙ্গে বেড়েছে অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকের ব্যক্তিগত আবেদন।

গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে মার্ক্সবাদে অনুপ্রাণিত দুটি বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিল জেভিপি। রাষ্ট্র এর প্রতিশোধ-পাল্টা প্রতিশোধ নিতে দেরি করেনি। গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন, অপহরণ ও গণহত্যায় দলসংশ্লিষ্ট কমপক্ষে ৬০ হাজার মানুষ নিহত হর। এর মধ্যে দলের প্রতিষ্ঠাতা রোহানা উইজেবিরাসহ বেশির ভাগ জ্যেষ্ঠ নেতাও ছিলেন।

অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর দিশানায়েকে দলের পলিটব্যুরো সদস্য হন। দল সহিংসতার পথ ত্যাগ করে। বিশ্লেষকদের মতে, দিশানায়েকে সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে এক বৃহত্তর জোট গড়ে তুলতে পেরেছেন। এটাই তাকে জয়ের পথ তৈরি করে দিয়েছে।

বিক্ষোভের মুখে গোতাবায়া রাজাপক্ষে পালানোর পর রণিল বিক্রমাসিংহেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে দেশটির পার্লামেন্ট। এরপর দুই বছরের বেশি সময়ে তার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক সংকট থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় দেউলিয়া হওয়া শ্রীলঙ্কা। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে নেওয়া ঋণের শর্ত অনুযায়ী কর বাড়ানোসহ নানা পদক্ষেপ নেয় সরকার। এর চাপ পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, অর্থনৈতিক দুর্দশা থেকে উত্তরণের আশায় অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকেকে ভোট দিয়েছেন মানুষ। এখন তার বড় কাজ হবে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট থেকে দেশকে টেনে তোলা। ফলে নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরানো। এখন দিশানায়েকে দেশটির মানুষকে কতটা দিশা দেখাতে পারেন, সেটাই দেখার বিষয়।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর