রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৮ আগস্ট, ২০২৪ ৭:২৮ : অপরাহ্ণ
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবর আগে জানা ছিল না সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের।
তিনি জানিয়েছেন, ৫ আগস্ট তিনি যখন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন, ঠিক তখন তাকে জানানো হয়, শেখ হাসিনা চলে যাচ্ছেন।
সেনাপ্রধান এও বলেছেন, শেখ হাসিনা দেশে থাকলে তার জীবনের ঝুঁকি ছিল। পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত ছিল।
সম্প্রতি ইউটিউব চ্যানেল ‘নাগরিক টিভি’ তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনাকে সেইফ এক্সিট দেওয়া ঠিক ছিলো নাকি তাকে দেশে রেখে বিচার করা উচিত ছিলো-এমন এক প্রশ্নের জবাবে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘ওই সময়ে একটি উত্তপ্ত মুহূর্তে তাকে ওখানে রেখে দিলে সমস্যা হতো। আর প্রথম কথা হচ্ছে, আমিতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছিলাম। তখন আমাকে কিছু ব্যক্তি বলেছে যে, উনিতো চলে যাচ্ছেন। উনি অলরেডি রান। তো এটা আমি জানতাম না যে, তিনি দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন। তারপরও আমি মনে করি যে, উনি দেশে থাকলে ওনার জীবন ঝুঁকি হতে পারতো। কেউ চাইবে না যে একজনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হোক। এটা মোটেই কাম্য না। পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তপ্ত ছিলো।’
সেনাবাহিনীর মধ্যে এখনো অনেক বিতর্কিত কর্মকর্তা অনেকে স্বপদে রয়েছে। তাদেরকে কেন দায়িত্ব থেকে সরানো হচ্ছে না-এই প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, ‘এখনো তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনেক ইস্যু আছে। যেগুলো তদন্ত হচ্ছে। এজন্য আমরা সময় নিচ্ছি, প্রমাণ লাগবে, প্রমাণিত না হলে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। এই কাজটি একটু ধীর প্রক্রিয়ায় চলছে। এখন দেখা যাক, বেশকিছু জিনিস আছে যেটা আমাদের করতে হবে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সেনাবাহিনী সহযোগিতা করছে উল্লেখ করে জেনারেল ওয়াকার বলেন, ‘সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। ১৬ বছরের জঞ্জাল ১৬ দিনেতো মিটবে না। ১৬ মাসেও যদি আমরা মেটাতে পারি সেটা অবশ্যই একটি ভাল বিষয় হবে। অনেক সমস্যা হয়েছে, বুরোক্রেসির মধ্যে সমস্যা, পুলিশের মধ্যে সমস্যা। সবদিকেই সমস্যা। তো এগুলো সমাধান করতে একটু সময় দিতে হবে। এই সরকারকে সময় দিতে হবে। আমরা যদি অধৈর্য্য হয়ে যাই, তাহলে অবশ্যই এটা ঠিক হবে না। এই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা তাদেরকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছি।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি আশাবাদী সবাই একসঙ্গে যদি কাজ করি তাহলে দেশ সংস্কার করা সম্ভব হবে। এবং আমরা একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে সম্ভব হবো। আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আমিও তাদের সাথে আছি কাজ করছি। এই সরকারকে সাহায্য করছি। আমরা সেই লক্ষ্যে যাবো, যেতে হবে। কারণ এখান থেকে ফেরত যাওয়ার কোন অবকাশ নেই। জনগণকে ধৈর্য্য ধরতে হবে।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে জেনারেল ওয়াকার বলেন, ‘এখন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যে সরকার যখন থাকে তার সঙ্গে কাজ করে। এর অর্থ এই না যে সবাই স্বৈরাচারকে সহায়তা করেন। স্বৈরাচার হোক আর যাই হোক, দৈনন্দিন কাজতো তাদের করে যেতে হবে। সেই কাজ তারা করেছে। কিছু ভাল করেছে। কিছু খারাপ করেছে। কিন্তু এভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করা যাবে না। সবাইকে এভাবে সিল দিয়ে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক নয়। অবশ্যই যারা দোষী তাদেরকে খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘আতঙ্ক সৃষ্টি করলে প্রশাসন কাজ করবে না। কেউ কাজ করবে না। সবাই ভীত থাকবে। যেমন পুলিশের মধ্যে এমন একটি সমস্যা হচ্ছে। তাদের মধ্যে একটি বিশাল ট্রমা কাজ করছে। কাজেই এই ট্রমা যদি বিরাজ করে তাহলে হবে না। তাদের এই ট্রমা থেকে বের করে আনতে হবে। এজন্য একটু সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। ইনশাআল্লাহ এই সরকার আস্তে আস্তে সবকিছু সামাল দিয়ে উঠবে।’
আনসার বাহিনীর মতো নানা দাবিতে যারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে এটাকে সেনাবাহিনী কিভাবে দেখে-এমন প্রশ্নের জবাবে জেনারেল ওয়াকার বলেন, ‘এটাকে আমরা অবশ্যই কাউন্টার কোড করছি। নাইন ডিভিশন কাজ করেছে এবং আনসারদের নিবৃত করেছে।’
সেনাবাহিনী এখনো কেনো ব্যারাকে ফিরে যাচ্ছে না, তাদের এখন মাঠে থাকা উচিত কিনা-এই প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা তো যেতে চাই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেতে চাই। তবে সম্ভবত আমাদের আরো কিছুকাল থাকতে হবে। কারণ পুলিশ এখনো তাদের দায়িত্ব নেয়ার মত অবস্থায় নাই। পুলিশ প্রায় অকার্যকর হয়ে গিয়েছিলো। এখনো দায়িত্ব নেয়ার মত হয়নি। তারা দায়িত্ব নেয়ার মত হলে অবশ্যই আমরা ফেরত চলে যাবো। আমরাতো বেশিক্ষণ থাকতে চাই না।’
আরও পড়ুন: ভারতে থাকার মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে শেখ হাসিনার