শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা দেশজুড়ে

সীমান্ত দিয়ে পালাতে গিয়ে বিজিবির হাতে ধরা সাবেক বিচারপতি মানিক


সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে বিজিবির হাতে ধরা পড়েন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :২৩ আগস্ট, ২০২৪ ১১:৫১ : অপরাহ্ণ

সিলেটের কানাইঘাট দনা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

আজ শুক্রবার রাত ১০টার দিকে তাকে আটক করা হয়। ভারতে পালানোর সময় তাকে আটকের কথা জানিয়েছে বিজিবি।

বিচারপতি মানিককে আটকের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে একটি ভিডিও ভারতের ভেতরের। আরেকটি ভিডিও বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে।

ভারতের সীমান্তের ভেতরের ভিডিওতে বিচারপতি মানিককে একটি জঙ্গলের মধ্যে কলাপাতায় শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। এ সময় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি এ দেশে (ভারত) এসেছি কি বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য।’

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, তার সামনে অবস্থান করা লোকদেরকে বিচারপতি মানিক বলছেন, ‘আমি তোমাদের পয়সা দিয়ে দেবো। পয়সা আমি দেবো, আমার ভাই-বোন দেবে।’

জবাবে তাদের মধ্যে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের পয়সার প্রয়োজন নাই। আপনার সেফটি… ’

এরপর মানিককে বলতে শোনা যায়, ‘ওই ফালতু লোক দুটাকে আনিও না। আমি এ দেশে এসেছি কি বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য ?’

এই ভিডিওটি যে আসলেই ভারতের ভেতরকার তার প্রমাণ পাওয়া যায় বিজিবির হাতে বিচারপতি মানিক আটক হওয়ার পরের আরেকটি ভিডিওতে।

সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে বিজিবি সদস্যদের কাছে মানিক স্বীকার করেছেন, তিনি ১৫ হাজার টাকার কন্টাক্টে ভারতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দুজন লোক ভারতের ভেতরে নিয়ে তাকে মারধর করে ৬০-৭০ লাখ টাকা নিয়ে যায়।

আরেক ভিডিওতে বিজিবি সদস্যকে মানিককে প্রশ্ন করতে দেখা যায়, আপনি পালাচ্ছেন কেন। জবাবে বিচারপতি মানিক বলেন, না পালাইরে আমারে মেরে ফেলবে।’ সে সময় বিজিবি সদস্য তাকে কেউ মারবে না বলে আশ্বস্ত করেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করায় সাবেক বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে নোয়াখালীর আদালতে মামলা করা হয়েছে।

গত ১৯ আগস্ট জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হাসান পলাশ বাদী হয়ে নোয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নম্বর আমলি আদালতে মামলাটি করেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, জিয়াউর রহমান সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন সাবেক বিচারপতি মানিক। তিনি বলেছিলেন, ‘জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, ছিলেন পাকিস্তানের চর’। জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক পরিচয়ে মিথ্যাচারসহ কালিমা লেপনের হীন উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে মানহানিকর বক্তব্য দেন তিনি। যা প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হয়। তার এমন মন্তব্যে জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। 

 

মামলার বাদী রবিউল হাসান পলাশ গণমাধ্যমকে বলেন, সাবেক বিচারপতি মানিক জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক পরিচয়ে মিথ্যাচারসহ কালিমা লেপনের হীন উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন। তাই এই মামলা দায়ের করেছি।

এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আপিল বিভাগের বিচারপতি ছিলেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি অবসরে যান।

সাবেক এই বিচারপতি আওয়ামী লীগ সরকারের ঘোর সমর্থক ছিলেন। সরকারের কার্যক্রম সমর্থন করে টকশোতে আলোচনা করতেন।

কোটা আন্দোলন ইস্যুতে সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে আয়োজিত টকশোতে আলোচক হিসেবে হিসেবে অংশ নেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। কিন্তু আলোচনার একপর্যায়ে মেজাজ হারিয়ে সঞ্চালক দীপ্তি চৌধুরীর ওপর ক্ষিপ্ত হন তিনি। পুরো অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকবার উপস্থাপিকার ওপর নিজের ক্ষোভ ঝাড়েন এবং উচ্চবাচ্য করেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি অনুষ্ঠান শেষে স্টুডিও ছাড়ার আগে উপস্থাপিকাকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে আখ্যা দেন। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।

পরে উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরীকে রাজাকারের বাচ্চা বলে সম্বোধন ও অশালীন আচরণের ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন সাবেক বিচারপতি মানিক। একই সঙ্গে তিনি জনগণের কাছেও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। গত ১২ আগস্ট তাকে (বিচারপতি মানিক) লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজের কাছে লিখিতভাবে এ ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলায় পলককে মারতে আসেন কাদের

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর