রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১১ আগস্ট, ২০২৪ ১০:০১ : পূর্বাহ্ণ
সদ্য পদত্যাগ করা প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে নিয়ে গতকাল শনিবার (১০ আগস্ট) জুডিশিয়াল ক্যু করার ষড়যন্ত্র করেছিল আওয়ামী লীগ। এই ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত। এই জুডিশিয়াল ক্যু পরিকল্পনার তথ্য পেয়ে যান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দারা। তাদের দেওয়া তথ্য পেয়ে এই ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
‘ষড়যন্ত্র ফাঁস’ শিরোনামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপে এসব তথ্য উল্লেখ করে গতকাল একটি পোস্ট দেন সংগঠনটির সহসমন্বয়ক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ।
প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পদত্যাগ দাবিতে গতকাল শনিবার (১০ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে সাড়ে তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভের মুখে দুপুর আড়াইটার দিকে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আপিল বিভাগের আরও পাঁচজন বিচারপতিও পদত্যাগ করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহসমন্বয়ক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ ‘ষড়যন্ত্র ফাঁস’ শিরোনামে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে যা লিখেছেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘‘প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগের নেপথ্যে কঠিন ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেছে। শেখ হাসিনাকে এক্স প্রধান বিচারপতি সিনহা যেভাবে অবৈধ ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন, ঠিক তেমনি ষড়যন্ত্র করেছিল ওবায়দুল হাসানসহ কয়েকজন।
যে রিপোর্ট এখনো মিডিয়া প্রকাশ করেনি তা নিম্নরূপ-
সজীব ওয়াজেদ জয় এতদিন আপনাদের সঙ্গে ‘আমি নাই, মা নাই’ বলে বলে হঠাৎ শুক্রবার রয়টার্সকে বলেছেন তার মা পদত্যাগ করেননি। এটি একটি পরিকল্পিত ঘোষণা ছিল যা বোঝা গেছে আজ (শনিবার)।
সেনাবাহিনীর নিচের দিকের অফিসাররা যদি জনগণের পক্ষে না থাকত, তাহলে আজকে আরেকটা রক্তের বন্যা বয়ে যেত। আজকেও সেনাবাহিনীর ছোট অফিসাররা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থেকে ছাত্র জনতাকে বাঁচিয়েছেন।
আজকে একটা ক্যুয়ের প্ল্যান করেছিল জয় এবং আরাফাত। কিন্তু সঠিক সময়ে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দারা ছাত্রদের কাছে তথ্য ফাঁস করে দেয়। এই তথ্য জানার পরে জুডিশিয়াল ক্যু রুখে দেয় ছাত্ররা।
জয়-আরাফাত আর তাদের গাইডদের গোপন প্ল্যান ছিল এইরকম। ড. মোহাম্মদ ইউনুস যখন রংপুরে আবু সাঈদের বাড়ি পরিদর্শন এবং কবর জিয়ারতের জন্য যাবেন এবং তারপর উনার হেলিকপ্টার যখন আকাশে থাকবে, ঠিক সেই সময়ে হাইকোর্টের অ্যাপিলিয়েড ডিভিশনের বিচারপতিরা ফুলকোর্ট বসিয়ে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করবেন।
সঙ্গে সঙ্গে এই ক্যুয়ের সঙ্গে জড়িত সেনাবাহিনীর ২৫ কর্মকর্তা, চাকরি থেকে কর্মবিরতিতে থাকা দুর্নীতিবাজ পুলিশের একটি দল রাজধানীতে হট্টগোল শুরু করবে আর শেখ হাসিনা ভারত থেকে বাংলাদেশে চলে আসবেন এবং সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা মাঠে চলে আসবেন।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রধান বিচারপতি সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে হঠাৎ ৫৭ বিচারপতিকে জরুরি মিটিংয়ে ডাকেন। স্ক্রলে জরুরি মিটিং ডাকার সংবাদ দেখে দর্শকরাও কনফিউজড হন। কিন্তু আগে থেকে গোপন খবর পাওয়া ছাত্র জনতা সকাল ৯টার আগেই চতুর্দিক থেকে ছুটে এসে হাইকোর্ট ঘেরাও করে। সেনাবাহিনীর সমর্থনে প্রধান বিচারপতি পিছু হটতে বাধ্য হন এবং পালিয়ে থাকেন। মিটিং স্থগিত হয়। ছাত্ররা বিচারপতির বাসা ঘেরাও করে রাখে। সেনাবাহিনী শৃংখলা রক্ষার আবরণে সেখানে ছিল। পদত্যাগপত্র সরকারকে দেওয়া হয়েছে নিশ্চিত হয়ে ছাত্ররা হাইকোর্ট এবং বাসভবন ত্যাগ করে।’’
এদিকে, গতকাল শনিবার (১০ আগস্ট) রাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেন, ‘বিক্ষোভকারীরা সুপ্রিম কোর্টে হামলা এবং বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। তারা বিচারকের পদত্যাগ দাবি করে এবং তারা নিয়োগের জন্য লোকদের নামের তালিকা সরবরাহ করে। অন্তর্বর্তী সরকার তাদের দাবি মেনে নেয় এবং বিক্ষোভকারীদের প্রস্তাবিত বিচারপতি নিয়োগ করা হয়। একটি দেশের সর্বোচ্চ আদালত কীভাবে কোনো যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া, নির্বাচিত সংসদ ছাড়া পরিবর্তন করা যায়? এটা সংস্কার নয়, এটি গণঅরাজকতা। বাংলাদেশে কোন আইনশৃঙ্খলা নেই, এমনকি সুপ্রিম কোর্টও নিরাপদ নয়।’
আরও পড়ুন:
মা পদত্যাগ করেননি, তিনি এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী: জয়
আ.লীগের কেন্দ্রীয় অফিস এখন ছাত্র-জনতার কার্যালয়
সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আ.লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি
শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার শেষ চার ঘণ্টা যা ঘটেছিল
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিরা কে কোথায়