রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :৩ আগস্ট, ২০২৪ ৬:২৫ : অপরাহ্ণ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম এ ঘোষণা দেন।
নাহিদ ইসলাম মাইকে সমবেত মানুষের উদ্দেশে বলেন, ‘মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা এক দফা দাবির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। এক দফাটি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ এই সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদের বিলোপ।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে আমরা খুব দ্রুতই ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের জন্য সর্বস্তরের নাগরিক, ছাত্রসংগঠন ও সব পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে মিলে সম্মিলিত মোর্চা ঘোষণা করব। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জাতীয় রূপরেখা আমরা সবার সামনে হাজির করবো।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শুধু শেখ হাসিনা নয়, মন্ত্রিসভাসহ পুরো সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে৷ এই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিলোপ করতে হবে৷ আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে চাই, যেখানে আর কখনো কোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্র-ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে৷’
আগামীকাল রোববার থেকে সারাদেশে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গত ১৯ জুলাই আমরা কারফিউ ভঙ্গ করে শাটডাউন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছিলাম। সে বক্তব্য কোনো মিডিয়ায় প্রচার করতে দেওয়া হয়নি। সে রাতে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম অত্যাচার করা হয় এ ঘোষণার জন্য এবং আন্দোলন প্রত্যাহার ও সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য জবরদস্তি করা হয়।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক বলেন, ‘পরবর্তীতে ডিবি অফিস থেকেও আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দফতরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আমাদের অনশন ও রাজপথে আন্দোলনের কারণে সে পরিকল্পনা সফল হয়নি।’
নাহিদ ইসলাম হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘ছাত্রজনতা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিল। সরকার দমন-পীড়ন করে সেটিকে সংঘাত ও সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধ করে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এবার এরকম পরিস্থিতি হলে কারো জন্যই পরিণতি ভালো হবে না।’
আজ শহীদ মিনারে সামনের সারিতে অন্তত ছয়জন সমন্বয়ক উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন-নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও আবদুল কাদের। তাঁদের মধ্যে নাহিদসহ তিনজন বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন শুরু হয় গত ১ জুলাই। এরপর গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারাদেশে। এর পরদিন থেকে এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ ও সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২১৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বহু মানুষ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা থেকে সারাদেশে কারফিউ জারি করা হয়। সেইসঙ্গে মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী। এখনো বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। গত ২২ জুলাই থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। কিন্তু গতকাল শুক্রবার (২ আগস্ট) থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণমিছিল কর্মসূচিকে ঘিরে পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
আরও পড়ুন:
বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানী, হাজারো ছাত্র-জনতার মুহুর্মুহু স্লোগান
প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
‘অসহযোগ আন্দোলন’ সফল করতে দেশবাসীর উদ্দেশে ১৫ নির্দেশনা