শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই আমাদের আটকে রাখা হয়েছিল: ৬ সমন্বয়ক


ডিবি কার্যালয়ে হেফাজতে থাকার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক। ফাইল ছবি

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :২ আগস্ট, ২০২৪ ১২:৪১ : অপরাহ্ণ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন তারা। ডিবি হেফাজতে থাকাকালে ৬ সমন্বয়ক ভিডিও বার্তায় আন্দোলন প্রত্যাহারের যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তা স্বেচ্ছায় দেননি বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া ডিবি হেফাজতে প্রায় ৩২ ঘণ্টারও অধিক সময় অনশনে থাকলেও তাদের পরিবার ও মিডিয়া থেকে তা গোপন করা হয় বলে জানিয়েছেন তারা।

আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এসব কথা বলেন।

বিবৃতিদাতা ছয় সমন্বয়ক হলেন-মো. নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, নুসরাত তাবাসসুম ও আবু বাকের মজুমদার।

বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ‘ডিবি অফিস থেকে গত ২৮ জুলাই রাতে প্রচারিত আন্দোলন প্রত্যাহার করা সংক্রান্ত ভিডিও বার্তাটি তারা স্বেচ্ছায় দেননি। তাদের জোর করে খাবার টেবিলে বসিয়ে ভিডিও করা হয়েছে। মিথ্যা বিবৃতি দেওয়ানো হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সিদ্ধান্ত ডিবি অফিস থেকে আসতে পারে না। সারাদেশের সকল সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ব্যতীত কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গৃহীত হবে না।’

 

ছয় সমন্বয়ক বলেন, ‘আমাদের ছেড়ে দেবার আশ্বাস দিয়ে পরিবারকে ডেকে ১৩ ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয় এবং মিডিয়ায় মিথ্যা স্টেটমেন্ট দেওয়ানো হয়। আমাদের শিক্ষকরা দেখা করতে আসলে, দেখা করতে দেওয়া হয়নি।’

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘অন্যায়ভাবে সমন্বয়কদের আটক, সারাদেশে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের প্রতিবাদে গত ৩০ জুলাই রাত থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের ডিবি অফিসে আটক অবস্থায় অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। পরবর্তীতে সে খবর জানামাত্র সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুলাহ ও নুসরাত তাবাসসুমও অনশন শুরু করেন।’

ছয় সমন্বয়ক বলেন, ‘অনশনের কথা পরিবার ও মিডিয়া থেকে গোপন করা হয়। প্রায় ৩২ ঘন্টারও অধিক সময় অনশনের পর ডিবিপ্রধান ছয় সমন্বয়ককে মুক্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিলে অনশন ভাঙা হয়। আমাদের পয়লা অগাস্ট দুপুর দেড়টায় পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। গত সাতদিন ডিবি অফিসে আমাদের ও আমাদের পরিবারের সাথে নানা হয়রানি, নির্যাতন ও নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘আমরা গুম, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন থেকে নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা চেয়েছিলাম; আমরা আমাদের মত প্রকাশের অধিকারের নিশ্চয়তা চেয়েছিলাম। কিন্তু অসাংবিধানিক ও আইনবহির্ভূতভাবে আমাদেরকে ডিবি হেফাজতে আটকে রাখা হয়। প্রথমে নিরাপত্তার কথা বললেও পরে আদালতের কথা বলা হয়। আদালতের আদেশ ছাড়া নাকি আমাদের ছাড়া যাবে না।’

ছয় সমন্বয়ক বলেন, ‘মূলত আন্দোলন ও নেতৃত্বকে ছত্রভঙ্গ করতেই ১৯ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের গুম, গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তার নামে ছয় সমন্বয়ককে সাতদিন ধরে ডিবি হেফাজতে জোরপূর্বক আটকে রাখা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডিবি প্রধান নিরাপত্তার কথা বললেও আমাদেরকে আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্যই ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছিল।’

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘যারা নিরস্ত্র ছাত্র-নাগরিককে গুলি করে হত্যা করে তাদের হেফাজতে কেউই নিরাপদে থাকতে পারে না। সরকারের কাছে আমরা এই প্রহসনের নিরাপত্তা চাই না ৷ আমরা আমাদের ভাই বোনদের খুনের বিচার চাই।’

ছয় সমন্বয়ক বলেন, ‘ছাত্র-নাগরিক হত্যার বিচার ও আটককৃত নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। সারাদেশে ছাত্র-নাগরিকদের প্রতি আহ্বান থাকবে সরকারের মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা ও দমন-পীড়নকে তোয়াক্কা না করে রাজপথে নেমে আসুন। শহীদের রক্ত বৃথা যাবে না।’

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুলাই বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক-নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে তুলে নিয়ে যান সাদাপোশাকে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একদল সদস্য। পরদিন ২৭ জুলাই আরও তিন সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও নুসরাত তাবাসসুমকেও তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। পরে ডিবির পক্ষ থেকে তাদের হেফাজতে নেওয়ার কথা জানানো হয়।

আরও পড়ুন:

ছাড়া পেলেন ৬ সমন্বয়ক, গত ২ দিন ডিবি অফিসে অনশনে ছিলেন তারা

ডিবি হেফাজত থেকে বেরিয়ে মুখ খুললেন সার্জিস, বললেন ‘লড়াই চলবে’

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর