নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে ছয় সমন্বয়কে তুলে নেওয়া হয়েছিল তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তবে সমন্বয়করা গত দুই দিন ডিবি অফিসে অনশনে ছিলেন বলে তাদের স্বজনরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয় থেকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এই ছয় সমন্বয়ক হলেন-নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের, নুসরাত তাবাসসুম, সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ।
সমন্বয়ক নাহিদের বাবা বদরুল ইসলাম জানান, ভোরে সবার পরিবারকে ফোন দিয়ে ডিবি অফিসে আসতে বলা হয়। আমরা নাহিদকে নিয়ে বাসায় যাচ্ছি।
নাহিদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বদরুল ইসলাম বলেন, নাহিদ এখন কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। তারা দুই দিন ডিবি অফিসে অনশন করেছিল। সে এখন শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত।
এর আগে দুপুরে ডিবি হেফাজতে থাকা কোটা আন্দোলনকারী ছয় সমন্বয়কারীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
আনিসুল হক বলেছেন, কোটা আন্দোলনের ছয়জনের (আটকাদেশকে চ্যালেঞ্জ করে) যে মামলটা হাইকোর্টে দায়ের করা হয়েছে সেটা একজন বিচারপতির অসুস্থতাজনিত কারণে গতকাল (বুধবার) শুনানি হয়নি, একই কারণে আজ বৃহস্পতিবারও শুনানি হবে না বলে আমি জানতে পেরেছি।
আপনাদের (সাংবাদিকদের) জানানো প্রয়োজন উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, এটাও সঠিক যে তারা (৬ আন্দোলনকারী) তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই আমাদের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছিল, এবং সেই ব্যাপারে জিডিও করা আছে। তারা যখন বলছেন তাদের নিরাপত্তার আর প্রয়োজন নাই, তারা চলে যাওয়ার ইচ্ছা যখন পোষণ করে আমরা চলে যেতে কোনো বাধা দিইনি এবং তারা চলে গেছে।
তবে তারা কখন, কোথায় গিয়েছে, বা তাদের পরিবারের কেউ এসে নিয়ে গিয়েছে কি না সে বিষয়ে কিছু জানাননি আইনমন্ত্রী।
ছয় সমন্বয়ককে অবিলম্বে মুক্তি দিতে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী গুলি না চালাতে নির্দেশনা চেয়ে গেল সোমবার হাইকোর্টে রিট দাখিল করেন দুই আইনজীবী। গত সোমবার ও মঙ্গলবার রিটের ওপর হাইকোর্টের এই দ্বৈত বেঞ্চে শুনানি হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুলাই বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক-নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে তুলে নিয়ে যান সাদাপোশাকে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একদল সদস্য।
পরদিন ২৭ জুলাই আরও তিন সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও নুসরাত তাবাসসুমকেও তুলে যায় ডিবি পুলিশ।
পরে ডিবির পক্ষ থেকে তাদের হেফাজতে নেওয়ার কথা জানানো হয়।
গত ২৮ জুলাই রাতে ডিবি হেফাজতে থেকেই সব ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক। এ ঘটনায় ডিবির ভূমিকা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠে।
ওই দিন রাতে রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে ডিনার করার কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ। এ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ছয় সমন্বয়ককে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে খাওয়ানোর ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে জাতির সঙ্গে মশকরা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে হাইকোর্ট। ২৯ জুলাই হাইকোর্ট এ মন্তব্য করে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ নতুবা ছেড়ে দেওয়ার আলটিমেটাম দেয় বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ।
আরও পড়ুন:
সমন্বয়কদের খাওয়ানোর ছবি ফেসবুকে প্রকাশ জাতির সঙ্গে মশকরা: হাইকোর্ট
৬ সমন্বয়কসহ আটকদের ছেড়ে দিতে ডিবিকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম