রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :২৯ জুলাই, ২০২৪ ১:০৪ : পূর্বাহ্ণ
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে উল্লেখ করে সারাদেশে সোমবার ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশ ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
রোববার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরের গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় এ কর্মসূচির কথা জানানো হয়েছে।
এর আগে ডিবি কার্যালয়ে হেফাজতে থাকা অবস্থায় আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক এক ভিডিও বার্তায় কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
পরে বাকি সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ও ছাত্রলীগের আক্রমনে নিহত শত শত শহীদের আত্মত্যাগ তিরস্কার করে ডিবি কার্যালয়ে বন্দুকের নলের মুখে জিম্মি করে সমন্বয়কদের মাধ্যমে জোরপূর্বক স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি আদায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমাদের দাবি আদায়ে আমরা অবিচল ছিলাম, রয়েছি এবং থাকব। প্রিয় দেশবাসী ও ছাত্রসমাজ, বিগত কয়েকদিন যাবৎ গণহত্যা, গণগ্রেপ্তারের পর সরকার এখন এক নতুন নাটকের সৃষ্টি করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি দিয়ে, ছাত্রসমাজের দাবিগুলোর প্রতি সরকার চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘শুধু তাই নয়, সারাদেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত শহীদদের পরিবারকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে, আর্মড ফোর্সকে ব্যবহার করে ঢাকায় এনে সরকার তাদের থেকে মিথ্যা জবানবন্দি নেওয়া ও সমস্ত দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপিয়ে শহীদের রক্তের সঙ্গে তামাশা করেছে। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে ভাই, জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত ছাত্রসমাজ শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করতে পারে না।’
বার্তায় আরও বলা হয়, ‘দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের স্ট্রিম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের পর সরকার সারাদেশে রেইড করে গণগ্রেপ্তার করেছে। হাজার হাজার মামলা ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। জানালার পাশে পড়ার সময় কোমলমতি শিশু সামিরকে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে। এমনকি স্কুল ও কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে আহত ও শহীদ করা হয়েছে। এই অবস্থায় আমরা কঠোর ভাষায় বলতে চাই, আমাদের দাবি আদায় না হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ছাত্রসমাজের আন্দোলন চলবে।’
এদিকে ডিবি কার্যালয়ে হেফাজতে থাকা অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আরেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের।
তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সমন্বয়কদের জিম্মি করে নির্যাতনের মুখে যে স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়েছে, সেটা কখনোই জাতির নিকট গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আটককৃত সমন্বয়করা ভয়ভীতির মুখে গোয়েন্দা সংস্থার লিখে দেওয়া যে বক্তব্য কেবল রিডিং পড়ে গেছে, আমরা সেই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি এবং একইসঙ্গে জোরপূর্বক বক্তব্য আদায় করার মতো সরকারের এমন জঘন্য কাজের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
আব্দুল কাদের আরও লিখেছেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, পূর্বে উত্থাপিত ছাত্র হত্যার দায়ে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ নয় দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান, আপনারা কোনোপ্রকার বিভ্রান্ত হবেন না। যে কোটার জন্য সরকার এতগুলা মানুষকে হত্যা করেছিল, সেই হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
আরও পড়ুন: ডিবি হেফাজতে থেকে ভিডিও বার্তায় কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা ৬ সমন্বয়কের