কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত বিএনপির ৯ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে চোখ ও হাত-পা বেঁধে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
আজ রোববার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ অভিযোগ করেন।
কারাগারে নেতাকর্মীদের নির্মম নির্যাতনের মধ্যে রাখা হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত সাবেক এমপি, মন্ত্রীসহ বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাদের সন্ত্রাসীদের মতো ৫-৭ দিন করে রিমান্ডে নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদের নির্মমভাবে চোখ ও হাত-পা বেঁধে শারীরিক নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ের নিরন্তর চেষ্টা চলছে। তারা আদালতকে অবহিত করেছেন। তারপরেও আদালত সরকারপ্রধানের ইশারায় তাদের রিমান্ড অব্যাহত রেখেছেন। তাদের শারীরিক সুস্থতা নিয়ে দেশবাসী শঙ্কিত। তাদের ওপর চলমান নির্যাতনে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হয়ে গেলে এর দায় সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই নিতে হবে।’
সরকারকে হুঁশিয়ার করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার যতই ছলচাতুরি করুক না কেন, গণদাবির কাছে পদত্যাগ করতেই হবে। মানুষ যখন প্রতিবাদ শুরু করেছে এই প্রতিবাদের ধারা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, ‘সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে সারা দেশে যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে এবং হত্যা-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে তা অবিলম্বে বন্ধ করে পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবে।’
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকে নিয়ে সরকার দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করছে’—এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নিরীহ ছাত্র-ছাত্রী এবং কোটা সংস্কারের নেতাদের নির্যাতন করা হবে না। অপর দিকে প্রতিনিয়ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষ, প্রতিবন্ধী শিশু এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার এমনকি চাকরিজীবীরা পর্যন্ত এ ধরনের অমানবিক কর্মকাণ্ড থেকে রেহাই পাচ্ছে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালাচ্ছে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যারা প্রকাশ্যে সাধারণ ছাত্রদের বুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করলো, তাদের একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি, তাদের নিয়ে সরকারপ্রধান মায়াকান্না করছে।’
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় হতাহতের তালিকা প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিভিন্ন সূত্রে ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি হত্যার সংখ্যা অনেক লম্বা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি স্থাপনাগুলোর বর্ণনা দেওয়া হলেও কোটাবিরোধী আন্দোলনে মৃত্যুর তালিকা এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। মৃত্যুকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই মৃত্যুর তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না।’
বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে গ্রেপ্তার বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতারা এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধ এবং অবিলম্বে সবার নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: ‘নুরকে রিমান্ডে ইনজেকশন পুশ ও ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছে’