রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :১৪ জুলাই, ২০২৪ ২:৪২ : অপরাহ্ণ
কোটা সংস্কারের দাবিতে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিতে গণপদযাত্রা করছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় পদযাত্রাটি গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের সামনে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বঙ্গভবনের দিকে রওনা হন তারা।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১০ নেতা রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিতে গেছেন।
আজ রোববার দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বঙ্গবভনের দিকে রওনা হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
মিছিলটি গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের কাছে পৌঁছালে পুলিশের ব্যারিকেডের কারণে সেখানে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এসময় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট মোড় এবং সচিবালয়ের সামনে অবস্থান করেন। এতে করে পুরো সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এর প্রায় ১৫ মিনিট পর শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড সরিয়ে আবারও যাত্রা শুরু করেন। এ সময় কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর কোটাবিরোধী স্লোগানে মুখর ছিল চারপাশ।
পুলিশি বাধায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আটকে রয়েছেন গুলিস্তান এলাকাতেই। সেখান থেকেই ১০ সদস্যের একটি দল রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিতে যান।
এর আগে, সকাল ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। পরে পদযাত্রাটি শাহবাগ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউশন, মৎস্য ভবন হয়ে এগিয়ে যেতে থাকে। এ সময় পুলিশ প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে যেতে বাধা দেয়। পরে সচিবালয়ের সামনে রাস্তা দিকে এগিয়ে যান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: মিছিল নিয়ে বঙ্গভবনের পথে শিক্ষার্থীরা
সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া/অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম (সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ) আইন পাশ করতে হবে-এই এক দফা দাবিতে আজ গণপদযাত্রা শুরু করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা।
গতকাল শনিবার সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং গণপদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেইসঙ্গে নাম উল্লেখ না করে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের করা মামলা প্রত্যাহারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে গত দুই সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। গত ৭ জুলাই থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, প্রধান মহাসড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।
ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
২০২১ সালে সেই পরিপত্রের ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে’র অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন এই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত।
গত ৪ জুলাই সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
গত ১০ জুলাই হাইকোর্টের দেওয়া সেই রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। অর্থাৎ হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের আগে যে অবস্থা ছিল সেই অবস্থায় থাকবে। এ বিষয়ে আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। তবে আদালতের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা।