সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে এক ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা।
আজ শুক্রবার বিকেলে কয়েকশ শিক্ষার্থী ঢাবি লাইব্রেরি থেকে মিছিল নিয়ে ৫টা ২০ মিনিটে শাহবাগ মোড় এসে সড়ক আটকে দেন। সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিট পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দেন।
এ সময় শাহবাগ মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়।
সমাবেশ শেষে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ঢাবি শিক্ষার্থী আবু বাকের মজুমদার জানান, আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেওয়া হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আজকের কর্মসূচি অনুযায়ী, কোটা বাতিলের দাবিতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বিকেলে দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ বাধা দেয় ও হামলা চালায়।
গত ৭ জুলাই থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে এই অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথম দুদিন অর্ধদিবস অবরোধ চলার পর মঙ্গলবার বিরতি দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে বরদাশত করা হবে না, শিক্ষার্থীদের ডিএমপি কমিশনার
উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।
ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
২০২১ সালে সেই পরিপত্রের ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে’র অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন এই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত।
গত ৪ জুলাই সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
গতকাল বুধবার হাইকোর্টের দেওয়া সেই রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। অর্থাৎ হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের আগে যে অবস্থা ছিল সেই অবস্থায় থাকবে। এ বিষয়ে আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। তবে আদালতের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন:
কুমিল্লায় কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের তুমুল সংঘর্ষ, গুলি
শাহবাগে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙলো আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা
সরকার চাইলে কোটার হার পরিবর্তন করতে পারবে, হাইকোর্টের রায়