মঙ্গলবার, ১৮ জুন, ২০২৪ | ৪ আষাঢ়, ১৪৩১ | ১১ জিলহজ, ১৪৪৫

মূলপাতা আন্তর্জাতিক

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাতের ময়দান


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৫ জুন, ২০২৪ ১০:১৫ : পূর্বাহ্ণ
গতকাল মক্কা থেকে মিনায় পৌঁছেছেন হাজিরা, এর মাধ্যমেই শুরু হয়েছে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। ছবি: সংগৃহীত
Rajnitisangbad Facebook Page

আজ পবিত্র হজ। প্রতি বছর ৯ জিলহজ সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কার ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে আরাফাতের ময়দানে সেলাইবিহীন শুভ্র কাপড়ে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সমবেত থাকবেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ মানুষ। এটি পবিত্র ‘আরাফাত দিবস’ হিসেবেও পরিচিত।

এ বছর বিশ্বের ২০ লাখের বেশি হজযাত্রী সমবেত হচ্ছেন ইসলামের পবিত্র স্থান এবং নবী হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে। কণ্ঠে তাদের সমস্বরে উচ্চারিত হচ্ছে-‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার’।

পবিত্র হজের মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মাফ করেন মহান আল্লাহ। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহর কাজ থেকে দূরে থাকে, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর প্রকৃত হজের পুরস্কার জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর-১/২০৬)।

সাদা দুই টুকরা কাপড়ে শরীর ঢেকে হজযাত্রীরা আজ শনিবার মিনায় ফজরের নামাজ আদায়ের পর থেকেই পবিত্র আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। এই আরাফাতের ময়দানেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করে মুসলিমরা সমবেত হচ্ছেন এই পবিত্র প্রান্তরে।

গতকাল শনিবার মক্কা থেকে পাঁচ থেকে আট কিলোমিটার পূর্বে মিনায় তাঁবুতে অবস্থান করেন হজযাত্রীরা। সেখানে ইবাদত বন্দেগিতে দিন ও রাত পার করেছেন তারা। সেখান থেকে আজ ভোরে তারা আল্লাহকে কাছে পাওয়ার এক তীব্র আকাঙ্ক্ষায় ছুটে যাচ্ছেন আরাফাতের ময়দানে। মুখে মুহুর্মুহু উচ্চারণ করছেন—‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা, ওয়ান্‌নি’মাতা লাকা ওয়াল্‌মুল্‌ক্‌, লা শারিকা লাকা’। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।

খবরে বলা হয়, সারা বিশ্ব থেকে ২০ লাখের বেশি হজযাত্রী গতকাল শুক্রবার মিনায় তারবিয়া দিবস কাটিয়েছেন। এদিন তারা হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আরাফাত দিবসের প্রস্তুতি নেন। হজযাত্রীরা হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর দেখানো পথ অনুসরণ করে শনিবারের আরাফাত দিবসের জন্য তাদের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দক্ষ ট্রাফিক ও নিরাপত্তা পরিকল্পনা হজযাত্রীরা মসৃণভাবে হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারছেন। হজযাত্রীদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে ৩৪ হাজারের বেশি চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট এবং প্রশাসনিক কর্মীরা কাজ করেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

১৮৯টি নিবেদিত হাসপাতাল, চিকিৎসা কেন্দ্র এবং মোবাইল ক্লিনিকের অসুস্থ হাজিদের পরিবহণে ৭৩০টি অ্যাম্বুলেন্স এবং সাতটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ৭ জুন থেকে এসব চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে ১৮০ জন হজযাত্রীর হার্টে অস্ত্রোপচার এবং ৪৭০ জনেরও বেশি হাজির ডায়ালাইসিস করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭০ হাজারের বেশি হজযাত্রী মন্ত্রণালয় প্রদত্ত বিভিন্ন চিকিৎসা পরিষেবা গ্রহণ করেছেন। তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায় মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা পেতে ছাতা ব্যবহার এবং প্রচুর পানি পান করার আহ্বান জানিয়েছে।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী তৌফিক আল-রাবিয়া বলেছেন, ‘পবিত্র স্থানগুলো সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা হজ করতে আসা সবাইকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই।’

মিউনিসিপ্যাল, রুরাল ও আবাসন বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, পবিত্র স্থানগুলোতে হাজিদের সহায়তায় তাদের ২২ হাজার কর্মী কাজ করছেন। এ ছাড়া ৮৮ হাজার ডাস্টবিন সরবরাহ করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর