রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১১:০৫ : পূর্বাহ্ণ
আজ শনিবার পবিত্র শবে কদর। প্রতিবছর পবিত্র রমজানের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে (২৭ রমজান) শবে কদর পালন করা হয়। এই রাত মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত মহিমান্বিত একটি রাত।
মহান আল্লাহতায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় এবাদত-বন্দেগি করে থাকেন।
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আজ সন্ধ্যা থেকে সারাদেশে পবিত্র শবে কদর পালিত হবে।
‘শবে কদর’ ফারসি শব্দ। শব মানে রাত বা রজনী আর কদর মানে সম্মান, মর্যাদা, ভাগ্য ইত্যাদি। শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর।
ভারতীয় উপমহাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দি নানা ভাষাভাষী মানুষের কাছে এটি ‘শবে কদর’ নামেই সমধিক পরিচিত।
মহিমান্বিত এ রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। আবার লাইলাতুল কদরের সম্মানে ‘সূরাতুল কদর’ নামে একটি সূরাও আছে পবিত্র কোরআনে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি কদর (মর্যাদাপূর্ণ) রজনীতে। আপনি (রাসুল (সা.) কি জানেন মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাইলের (আ.) সঙ্গে অবতরণ করেন; তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষার উদয় পর্যন্ত।’ (সূরা-কদর, আয়াত: ১-৫)।
২০ রমজানের পর যেকোনো বিজোড় রাত কদর হতে পারে।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’ (সহীহ বুখারি, হাদীস নম্বর-২০১৭)
মুহাদ্দিসগণ (হাদিস শাস্ত্রবিদ) বলেন, লাইলাতুল কদরের রাতটি গোপন রাখার উদ্দেশ্য হলো, যাতে মানুষ শেষ দশকের প্রতিটি রাতকেই কদরের রাত মনে করে ইবাদত করে।
হাদিসে এসেছে যে, কদরের রাতটির কথা রাসুলের (সা.) অন্তর থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। ফলে তিনি সেটি ভুলে যান।
তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘হয়তো এর মধ্যেই তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে।’ (সহীহ বুখারি, হাদীস নম্বর-২০২৩)
২৭ রমজান লাইলাতুল কদর একেবারে নির্ধারিত-এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। তবে বহুসংখ্যক আলামত রয়েছে যে, ২৭ রমজান লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক।
হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলের (সা.) কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নের মাধ্যমে রমজানের শেষের সাত রাতে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়।
এ কথা শুনে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমাকেও তোমাদের মতো স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। তোমাদের দেখা ও আমার দেখা শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরের সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে তা সন্ধান করে।’ (সহীহ বুখারী, হাদিস নম্বর-২০১৫)
শেষ সাতের দুটি অর্থ। একটি হলো, সপ্তম দিনে অর্থাৎ ২৭ তারিখে। দ্বিতীয়টি হলো শেষ সাতটি রাতের যে কোনো একটি রাতে।
রাসুলের (সা.) সাহাবী হযরত উবাই ইবনে কাব (রা.), হযরত ইবনে আব্বাস (রা.), হযরত উমর (রা.) এবং ইমাম আবু হানিফা (রহ.) সহ অনেকেই ২৭ রমজান লাইলাতুল কদর হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন ।
এই মতের পক্ষে দলিল হলো, রাসুলের (সা.) সাহাবী হযরত উবাই ইবনে কাব (রা.) কসম খেয়ে বলতেন, রমজানের ২৭তম রাতটি লাইলাতুল কদর। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নম্বর-২৬৬৮)।
মুহাক্কিক (সঠিক চিন্তা-চেতনার অধিকারী) আলেমরা বলেছেন, আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দদ্বয়ে নয়টি হরফ বা আরবি বর্ণ রয়েছে। আর সূরা কদরে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দদ্বয় তিনবার রয়েছে। নয়কে তিন দিয়ে গুণ করলে সাতাশ হয়। তাই তাদের মতে ২৭ রমজানের রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। (তাফসিরে মাযহারি)।
আরও পড়ুন: শবে কদর কি ২৭ রমজানেই নির্ধারিত?