শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা ক্যাম্পাস রাজনীতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মসজিদ থেকে বের করে শিক্ষার্থীদের পেটালো ছাত্রলীগ


আজ দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মসজিদ থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে পিটিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৩ মার্চ, ২০২৪ ৮:২৪ : অপরাহ্ণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় মসজিদে রোজার আলোচনা থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে পিটিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে আইন বিভাগের ৬ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন।

আজ বুধবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

আলোচনা সভাটির আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী।

আহত শিক্ষার্থীরা হলেন-আইন বিভাগের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী সাফওয়ান, রেজওয়ান রিফাত, শাহীন, সাকিব তূর্য, মাহাদী, কুতুবউদ্দিন। শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মো. তাওহীদুল ইসলাম সুজনের নেতৃত্বে এ হামলা হয় বলে জানা গেছে। যদিও হামলাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন। সুজন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে ধর্মীয় আলোচনার সময় টাওয়ার কল্যাণ সমিতির সভাপতি সিরাজুল হক এসে তাদেরকে চলে যেতে বলে এবং একই সময় শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল সুজন এসে তাদেরকে হুমকি ধমকি দিলে তারা বের হয়ে যাওয়ার সময় ভবনের মূল ফটকের সামনে থেকে প্রায় ৪৫-৫০ জন তাদের ওপর হামলা করে এবং পরে বাইক নিয়ে চলে যায়।

ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে সুজনের ছবি দেখালে ভুক্তভোগীরা তাকে চিনতে পারে এবং জানান সুজনই মূলত সামনে থেকে এ হামলার লিড দিয়েছে। তাওহীদুল সুজন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডুর অনুসারী।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী আবু তালহা বলেন, আমরা ১২-১৩ জন জোহরের নামাজ বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদেই পড়ার পর রোজার ফজিলত নিয়ে আলোচনা করছিলাম। এটা কোনো দলীয় বা রাজনৈতিক কোনো কিছু ছিল না। তখনই বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কল্যাণ সমিতির সভাপতি পরিচয়ে একজন এসে আমাদেরকে বলল এখানে আলোচনা করা যাবে না। উনার কথা শেষ না হতেই আরেকজন এসে আমাদেরকে হুমকি-ধমকি দিতে থাকলে আমরা বের হয়ে যাওয়ার কথা বলি।

তিনি আরও বলেন, আমরা যখন গেট দিয়ে বের হই এমন সময় প্রায় ৫০ জনের মত বাইক নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা কাউকেই চিনতে পারিনি। আমাদের পাঁচ থেকে ছয়জন গুরুতর আহত হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন কর্মচারী জানান, আইন বিভাগের ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী নামাজ পড়তে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারে আসেন। এ সময় তারা নামাজ শেষেই রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করতে চাইলে বাধা দেন বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কল্যাণ সমিতির সভাপতি সিরাজুল হক।

তিনি বলেন, এখানে কোনো রকম প্রোগ্রাম আয়োজন করা উপাচার্য ও প্রক্টর থেকে নিষেধ করা আছে’। এ সময় শিক্ষার্থীরা সেন্ট্রাল মসজিদের দিকে যেতে চাইলে গেটের মুখেই ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন। তাদেরকে রাস্তায় ফেলে এলোপাতাড়ি কিল ঘুসি মারতে থাকেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গেটের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি গেট বন্ধ করে দিলে তারা বিভিন্ন দিকে দৌড়ে পালাতে থাকেন। পরে কয়েকজন কোনোভাবে গেট দিয়ে ঢুকে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের বিভিন্ন ফ্লোরে আশ্রয় নিয়ে নিজেদেরকে রক্ষা করেন।

আহত রেজোয়ান আহমেদ রিফাত বলেন, রমজান উপলক্ষে রমজান কীভাবে কাজে লাগাতে পারি, এ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিল। সেখানে হঠাৎ একজন এসে কল্যাণ সমিতির পরিচয় দিয়ে বললেন এখানে এগুলো করা যাবে না। তার পর আমরা বের হচ্ছিলাম এমন সময় বাইরে ১৫-২০ টা মোটরসাইকেলে করে এসে তারা যেভাবে পারছে আমাদেরকে মারধর করছে। কোন বিভাগ এটা জানার পর থেকে হামলা করেছে। আমাকে মাটিতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেছে।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কল্যাণ সমিতির সভাপতি সিরাজুল হক বলেন, তিনি সুজনকে চেনেন না। তবে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন তিনি সুজনকে চেনেন এবং সুজন সেখানে উপস্থিত ছিল। শিক্ষার্থীদেরকে বের হয়ে যেতে বলেন বলেও জানান তিনি। তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এ ঘটনায় সভাপতি সিরাজুল হকের সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাত থেকেই সিরাজুল হকের সঙ্গে সুজনের ফোনে কথপোকথনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত তাওহীদুল সুজন সম্পূর্ণ অভিযোগ অস্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেন, এ ঘটনায় আমি কোনো ভাবেই সম্পৃক্ত না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে আমি কেন মারতে যাব। আমি শুনলাম ফেসবুক থেকে আমার নাম ছবি নিয়ে আমার নামে এগুলো ছড়ানো হচ্ছে। এর পেছনে তাদের কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে তবে আমি কিছুই জানি না।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান বলেন, আমরা এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে ক্যাম্পাসের ভেতরে এ ধরনের হামলার ঘটনা প্রত্যাশিত নয়। আমরা ঘটনাকে বিশ্লেষণ করে দেখছি।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর