রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১২:৩১ : অপরাহ্ণ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য সকল মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্য রাখা, কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করাসহ ১১টি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তবে ইশতেহারে দলটি নিজেদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের তুলনা করেছে ১৭ বছর আগে ক্ষমতায় থাকা বিএনপির সঙ্গে।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ের গ্রান্ড বলরুমে এই ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।
ইশতেহার ঘোষণার সময় দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের রূপান্তর ঘটেছে। আজকের বাংলাদেশ দারিদ্র্যক্লিষ্ট, অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর বাংলাদেশ নয়। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। সম্ভাবনার হাতছানি দেওয়া দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা দুরন্ত বাংলাদেশ। ছোটখাট অভিঘাত আজ আমাদের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। করোনা মহামারিসহ নানা অভিঘাত মোকাবিলা করে সেই প্রমাণ আমরা রেখেছি।’
বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শেষ বছর ২০০৬ সালে বিভিন্ন আর্থসামাজিক সূচকে বাংলাদেশ কোথায় ছিল আর আজ বাংলাদেশ কোথায় অবস্থান করছে তার সংক্ষিপ্ত একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে জানান, ২০০৬ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় থাকতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ যা এখন ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। মাথাপিছু আয় (নমিনাল) ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে ২ হাজার ৭৯৩ মার্কিন ডলার যা ৫ গুণ বৃদ্ধি। বাজেটের আকার ৬১ হাজার কোটি টাকা থেকে ৭ লক্ষ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা যা ১২ গুণ বৃদ্ধি। জিডিপির আকার ৪ লক্ষ ১৫ হাজার ৭২ কোটি টাকা থেকে ৫০ দশমিক ৩১ লক্ষ কোটি টাকা যা ১২ গুণ বৃদ্ধি। রপ্তানি আয় ১০ দশমিক ০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৫২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ৫ গুণ বৃদ্ধি। বার্ষিক রেমিট্যান্স আয় ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারথেকে ২৪ দশমিক ০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ৬ গুণ বৃদ্ধি। বার্ষিক রাজস্ব আয় ৩৭ হাজার ৮৭০ কোটি টাকাথেকে ৫ লক্ষ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট থেকে ২৮ হাজার ৫৬২ মেগাওয়াট যা ৮ গুণ বৃদ্ধি। দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫১ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ অর্ধেক কমেছে।
এর আগে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির আহ্বায়ক ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। এরপর বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারের মূল থিম ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ। ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগানে ইশতেহারে ‘আমাদের বিশেষ অগ্রাধিকার’ শিরোনাম ১১ দফা অঙ্গীকার তুলে ধরা হয়েছে।
যে ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে-
১. দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
২. কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।
৩. আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
৪. লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
৫. দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো।
৬. ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
৭. নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা।
৮. সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা।
৯. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা।
১০. সাম্প্রদায়িকতা এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা।
১১. সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘দিনবদলের সনদ’ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সেই ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ছিল দলটির। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির ইশতেহারের শিরোনাম ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। আর সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের ইশতেহারের শিরোনাম ছিল ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’।