শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

চট্টগ্রাম চেম্বারে এমপি লতিফের একি কাণ্ড!



রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ৫:১৫ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের শীর্ষ সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই) যেন রাজনীতির মঞ্চ হয়ে উঠেছে! নগরীর আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সংগঠনটির কার্যালয়ে এখন ছদ্মবেশে রাজনৈতিক দলের সভার আয়োজন করা হচ্ছে।

গত বুধবার বিকেলে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের চতুর্থ তলায় চেম্বারের কনফারেন্স হলরুমে ‘স্বাধীনতা নারী শক্তি’ নামে একটি সংগঠনের সভা অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ এই সভার আয়োজন করেন।

চট্টগ্রাম-১১ আসনে বসবাসকারী নারী শ্রমিকদেরকে নিয়ে ২০১৭ সালে এমপি লতিফ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনটির ব্যানারে তিনি তার নির্বাচনীয় এলাকার বিভিন্ন স্থানে নারী শ্রমিকদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

গত বুধবার এই নারী সংগঠনটি নিয়ে তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় ট্রেড বডি চট্টগ্রাম চেম্বারের ভেতর সভা করলেন।

সভায় অংশ নেওয়া স্বাধীনতা নারী শক্তির একজন সদস্য রাজনীতি সংবাদকে জানিয়েছেন, বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া সভাটি শেষ হয় রাত সাড়ে ৮টার দিকে। দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘণ্টা ধরে চলা এই সভায় স্বাধীনতা নারী শক্তির ২১ জন পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে এমপি লতিফ সবাইকে উপহারও দেন। এরপর সবার জন্য ডিনারের আয়োজন করা হয়।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম চেম্বারের কনফারেন্স হলরুমেটি পাবলিক প্রোগ্রামের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রোগ্রামের জন্য ভাড়া দেওয়া হয় না।

চট্টগ্রাম চেম্বারের মতো বিজনেস কমিউনিটিতে এমপি লতিফের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে প্রশ্ন উঠেছে। চেম্বারের ব্যবসায়ী নেতারা এতে বিস্মিত হয়েছেন। তারা এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনা করছেন।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম চেম্বারে অতীতে কোনো ব্যবসায়ী নেতা কখনো কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেননি। দুই বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও প্রয়াত জাফরুল ইসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি থাকাকালে সেখানে দলীয় কোনো কর্মসূচি পালন করেননি। চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি এমপি লতিফ প্রভাব খাটিয়ে প্রথমবারের মতো চেম্বারে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ রাজনীতি সংবাদের কাছে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করেন।

তিনি প্রথমে দাবি করেন, ‘সভাটি চেম্বারের কনফারেন্স হলরুমে হয়নি। এটি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বেজমেন্ট ফ্লোরে হয়েছে।’

এরপর তিনি বলেন, ‘কনফারেন্স হলরুমে সভা করলেও তারা (স্বাধীনতা নারী শক্তি) ভাড়া নিয়ে করেছে। চেম্বারের অনুমতি ছাড়া তো আর করেনি।’

প্রশ্নের জবাবে এমপি লতিফ বলেন, ‘স্বাধীনতা নারী শক্তি একটি সামাজিক সংগঠন। আর আমার প্রথম পরিচয় হলো ব্যবসায়ী, এরপর রাজনীতিবিদ। যেহেতু রাজনীতি করি তাই বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা তো থাকবেই।’

এম এ লতিফ চেম্বারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে সভা করার বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করলেও রাজনীতি সংবাদের হাতে আসা ছবিতে দেখা গেছে, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের চতুর্থ তলায় বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জানতে চাইলে স্বাধীনতা নারী শক্তির পরিচালক বিবি মরিয়ম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‌‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কনফারেন্স হলরুমে আমরা এই সভা করেছি। এমপি লতিফ সাহেব এই সভার আয়োজন করেছেন।’

ওই সভায় অংশ নেওয়া স্বাধীনতা নারী শক্তির আরও দুজন পরিচালকের সঙ্গে রাজনীতি সংবাদের কথা হয়। কিন্তু তারা নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে চাননি।

তারা বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এমপি লতিফ তাদের সঙ্গে এই বৈঠক করেন। নির্বাচনের আগে বন্দর-পতেঙ্গা এলাকায় নারী শ্রমিকদের সুসংগঠিত করতে তিনি বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। নির্বাচনের সময় চট্টগ্রাম-১১ আসনে শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকায় এম এ লতিফের পক্ষে স্বাধীনতা নারী শক্তির সদস্যরা বিভিন্ন প্রচারণা চালাবে।

চট্টগ্রাম-১১ আসনের কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা জানিয়েছেন, ‘স্বাধীনতা নারী শক্তি’ সামাজিক সংগঠনের ছদ্মবেশে এম এ লতিফের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। এটা এমপি লতিফের একটা কৌশল। বন্দর-পতেঙ্গা শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা। এই আসনে নির্বাচনে নারী শ্রমিকদের একটা ভোট ব্যাংক রয়েছে। এই ভোট ব্যাংক নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে এমপি লতিফ ‘স্বাধীনতা নারী শক্তি’ সংগঠনটিকে ডাল হিসেবে ব্যবহার করে তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেন।

চট্টগ্রাম চেম্বারে এমপি লতিফের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা নিয়ে সংগঠনটির ব্যবসায়ী নেতারা নানা সমালোচনা করছেন।

চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘রাজনৈতিক সভা করার জন্য কনফারেন্স হলটি কীভাবে ভাড়া দেওয়া হলো এটা আমি জানি না। বিষয়টা নিয়ে চেম্বারের সেক্রেটারির সঙ্গে আমি কথা বলবো।’

চট্টগ্রাম চেম্বারের অপর পরিচালক মো. রেজাউল করিম আজাদ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘রাজনীতি করার অধিকার যে কারও আছে। কিন্তু চট্টগ্রাম চেম্বার তো ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের একটি সংগঠন। সেখানে কেন রাজনৈতিক চর্চা হবে?’

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ ও সেক্রেটারি প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফারুক দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন: শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম চেম্বারে কী হচ্ছে?

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর