রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ৫:৪৭ : অপরাহ্ণ
বিয়ের মাধ্যমেই নারী-পুরষের সম্পর্কের বৈধতা পায়। আইনানুযায়ী বিয়ে একটি দেওয়ানি চুক্তি। বিয়ে যেমন বৈধ। মুসলিম আইন তালাককেও তেমনি বৈধতা দিয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, তালাকের ক্ষমতা কি স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সমান? স্ত্রী কি চাইলেই তালাক দিতে পারে? কিংবা যদিই বা পারে তবে তার ইসলামী ও আইনি ভিত্তি কতটুকু? এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক-
স্ত্রী তার স্বামীকে তিনভাবে তালাক দিতে পারে-
এক. কাবিননামার ১৮ নাম্বার কলাম। যদি বিয়ের সময় কাবিননামার ১৮ নাম্বার কলামে স্ত্রীকে যদি এই ক্ষমতা দেওয়া হয় সে তার স্বামীকে তালাক দিতে পারবে, তাহলে স্ত্রী এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে তালাক দিতে পারবে।
সেই ক্ষেত্রে প্রথমে নোটিশ দিতে হবে। স্বামী যদি ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত এলাকার মধ্যে থাকে সে ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের কাছে অথবা স্বামী যদি সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে থাকে সেই ক্ষেত্রে মেয়র কার্যালয়ে নোটিশ দিতে হবে। একটা বিষয় মনে রাখবেন, চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে পাঠানো নোটিশের কপি স্বামীর ঠিকনায় অবশ্যই পাঠাতে হবে।
চেয়ারম্যান বা মেয়র এই নোটিশটি পাওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে তিনজনের সমন্বয়ে একটি সালিশ পরিষদ গঠন করবে। এই সালিশি পরিষদে স্বামী তার পক্ষে একজনকে মনোনীত করবেন এবং স্ত্রী তার পক্ষে একজনকে মনোনীত করবেন আর চেয়ারম্যান বা মেয়র একজনকে মনোনীত করবেন আর চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত করা ব্যক্তি হবেন এই সালিশি পরিষদের প্রধান।
এই সালিশি পরিষদের কাজ থাকবে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করা। তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করে স্বামী স্ত্রীকে পুনরায় সংসারে ফিরে পাঠানোর চেষ্টা করবে। সালিশী পরিষদ নোটিশ পাওয়ার দিন থেকে শুরু করে ৯০ দিন পর্যন্ত এই সমঝোতার চেষ্টা করবে। যদি সালিশি পরিষদ সমঝোতা করাতে ব্যর্থ হয় সে ক্ষেত্রে, স্ত্রীর নোটিশ প্রথম চেয়ারম্যান যেদিন গ্রহণ করেছিল সেদিন থেকে শুরু করে ঠিক ৯০ দিন পরে গিয়ে তালাক কার্যকর হয়ে যাবে।
দুই. খুলা তালাক। যদি কাবিননামার ১৮ নাম্বার কলামে এই ক্ষমতা স্ত্রীকে দেওয়া না হয়ে থাকে সেই ক্ষেত্রে স্ত্রী তার স্বামীকে খোলা তালাক দিতে পারে।খোলা তালাক হলো স্ত্রী তার স্বামীকে নিজ থেকে প্রস্তাব দিবে তাকে যেন তালাক দেয়, বিনিময়ে স্ত্রী তার স্বামী থেকে দেনমোহরের টাকা নিবে না বা অন্য কোন কিছু বিনিময়েও খুলা তালাক দেওয়া যায়। এই তালাকটি সমঝোতার মাধ্যমে হয়ে থাকে।
তিন. আদালতের মাধ্যমে তালাক। স্ত্রী কোর্টে গিয়ে তালাকের জন্য মামলা করতে পারে।
স্ত্রী যেসব কারণে তালাক দেওয়ার অধিকার অর্জন করে:
– স্বামী যদি চার বছর নিরুদ্দেশ থাকেন।
– স্বামী যদি দুই বছর ভরণপোষণ না দেন।
-স্বামী যদি আইনের লঙ্ঘন করে দ্বিতীয় বিবাহ করেন।
– স্বামী যদি সাত বছর বা এর বেশি সময়ের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন
– স্বামী যদি যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া তিন বছর বৈবাহিক দায়িত্ব পালন না করেন।
– স্বামী যদি পুরুষত্বহীন থাকেন।
– স্বামী যদি দুই বছর অপ্রকৃতিস্থ বা মারাত্মক ব্যাধিতে ভোগেন।
– নাবালিকা অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ে হয়ে থাকলে সাবালিকা হওয়ার পর স্ত্রী যদি তা অস্বীকার করেন।
– স্ত্রীর সঙ্গে স্বামী নিষ্ঠুর আচরণ বা নির্যাতন করলে।
পরকীয়া করলে স্ত্রী কি তার স্বামীকে তালাক দিতে পারেন?
হ্যা, স্বামী যদি অন্য নারীর সাথে মেলামেশা করেন বা অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তবে স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিতে পারেন। এছাড়াও শারীরকি ও মানসিক নির্যাতন, নৈতিকতাবিরোধী জীবনযাপন, স্ত্রীর সম্পত্তির বৈধ অধিকার প্রয়োগে বাধা প্রদান, স্ত্রীর ধর্মীয় চর্চায় বাধা প্রদান ইত্যাদি কারণে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারেন।