শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আইন-আদালত

সেই রাতে হারুনের সঙ্গে কী ঘটেছিল, জানালেন এডিসি সানজিদা


এডিসি হারুন অর রশিদ ও এডিসি সানজিদা আফরিন নিপা।

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ৮:২৩ : অপরাহ্ণ

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ঢাকার রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে মারধরের ঘটনায় মুখ খুলেছেন সানজিদা আফরিন নিপা। তিনি ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম বিভাগে অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুনের স্ত্রী তিনি।

গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে মারামারির ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন এডিসি সানজিদা।

তিনি বলেছেন, সেদিন রাতে বারডেম হাসপাতালে তার স্বামী আজিজুল হক প্রথমে এডিসি হারুনকে আঘাত করেন।

আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

এডিসি সানজিদা বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে আমার কার্ডিয়াক সমস্যা হচ্ছে। সেই ২০১৯ সাল থেকে আমি হাইপারটেনশনের ওষুধ খাচ্ছি। গত ৪-৫ মাস ধরে আমার সমস্যাটা বেড়ে যায়। গত ২-৩ সপ্তাহ ধরে চেস্ট পেইনটা একটু বেড়ে যায়। তাই তখন আমার একজন ডাক্তার দেখানোর দরকার ছিল। যেহেতু ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল স্যারের (এডিসি হারুন) জুরিসডিকশনের (আওতা) মধ্যে পড়ে, তাই ডাক্তারের সিরিয়াল পাওয়ার জন্য আমি স্যারের হেল্প চেয়েছিলাম।’

এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘‘যখন ডাক্তার দেখাতে যাই, তখন ডাক্তার কনফারেন্সে ছিলেন। পরে আমি স্যারকে (হারুন) জানাই। এরপর তিনি এলেন। আসার পর একটা ডাক্তার ম্যানেজ হলো। এরপর ডাক্তার কিছু টেস্ট দিলেন। টেস্টগুলো করতে আমি ইটিটি রুমে যাই। সেখানে পরীক্ষা করাতে আমার ২০-২৫ মিনিট সময় লাগে। হঠাৎ করে ইটিটি রুমের বাইরে হট্টোগোল শুনতে পাই। এসময় আমার হাজবেন্ডের কথা শুনতে পাই। এরপর কানে আসে স্যার (হারুন) চিৎকার করে বলছেন-‘ভাই আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন কেন? আপনি তো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না’। পরে কয়েকজন মিলে এডিসি হারুন স্যারকে মারতে মারতে ইটিটি রুমে নিয়ে আসে। সেখানে বেশ কয়েকজন ছেলে ছিল। আমি তাদের কাউকে চিনি না।’’

এডিসি সানজিদা বলেন, ‘ওই সময় স্যার (হারুন) নিজের সেফটির (নিরাপত্তার) জন্য আমি যেখানে দাঁড়ানো ছিলাম, সেই রুমের কোণার দিকে দৌঁড়ে এসে দাঁড়ালেন। আমি ইটিটি রুমে টেস্ট করার পোশাকে ছিলাম। স্বাভাবিক অস্থায় পোশাকটা খুব শালীন অবস্থায় ছিল না। এর মধ্যে আমার হাসবেন্ড ওই ছেলেগুলোকে বলে, দুজনের ভিডিও করো। এরপর সবাই ফোন বের করে ভিডিও করা শুরু করে। যখন তারা ভিডিও শুরু করে তখন আমি আমার হাজবেন্ড এবং তার সঙ্গে থাকা লোকজনের সঙ্গে চিল্লাচিল্লি শুরু করছিলাম। আমি এক ছেলের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি। এ সময় আমার হাজবেন্ড আমাকে চড় মারেন। তারা স্যারকে বার বার বলছিলো বাইরে বের হতে। স্যার তখন বলে, আমি বের হলে তো আপনার আমাকে মেরে ফেলবেন। পরে স্যার থানায় কল দেয়ার ১০-১৫ মিনিট পর ফোর্স আসে। পরে তারা নিচে চলে যায়।’

আপনি অসুস্থ সেটা আপনার হাজবেন্ড (আজিজুল হক মামুন) জানতেন কি না, জানতে চাইলে এডিসি সানজিদা বলেন, ‘আমি অসুস্থ সেটা আমার হাজবেন্ড জানতেন। কিন্তু আমি যে সেদিনই ডাক্তার দেখাতে যাবো, সেটা তিনি জানতেন না। এর আগেও বিভিন্ন সময় ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু সামহাউ তিনি মিস করে গিয়েছিলেন, অথবা বিজি ছিলেন। যেহেতু ৬-৭ দিন ধরে আমার সিভিয়ার চেস্ট পেইন হচ্ছিল …যাই হোক, সবসময় তো পরিস্থিতি সেরকম থাকে না যে আমি তার সঙ্গে শেয়ার করবো। যেহেতু আমার সিভিয়ার পেইন হচ্ছিল তাই আমি নিজেই ডাক্তারের কাছে গিয়েছি।’

তারপরও কীভাবে আপনার স্বামী জেনেছেন আপনি হাসপাতালে আছেন, জানতে চাইলে এডিসি সানজিদা বলেন, ‘আমার হাজবেন্ড কীভাবে জেনেছেন সেটা আমি জানি না।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পরকীয়ার সম্পর্কের অভিযোগের বিষয়ে এডিসি সানজিদা বলেন, ‘উনি (হারুন) আমার সিনিয়র কলিগ। এর বাইরে আর কোনো বিষয় নেই।’

প্রশ্নের জবাবে এডিসি সানজিদা বলেন, ‘এই ঘটনার পর স্বামীর সঙ্গে আমার আর কোনো কথা হয়নি। আমি আমার অফিসেই আছি।’

উল্লেখ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে।

দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন-ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম, বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ।

ভুক্তভোগী ও তাদের সহপাঠীদের অভিযোগ, এডিসি হারুন তাদের থানার ভেতরে নিয়ে বেড়ধক পেটান। এমনকি ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দেওয়ার পরও হারুনের সঙ্গে ১০-১৫ পুলিশ সদস্য মিলে তাদের পিটিয়েছেন।

আরও পড়ুন: সাময়িক বরখাস্ত হলেন পুলিশের সেই এডিসি হারুন

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর