রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১৪ আগস্ট, ২০২৩ ৭:৪৫ : অপরাহ্ণ
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। শরীরে জ্বর পুরোপুরি না কমায় উদ্বিগ্ন তার মেডিকেল বোর্ড। খালেদা জিয়া মেডিকেল বোর্ডের ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণে’ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আজ সোমবার রাতে মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক এ তথ্যা জানান।
ওই চিকিৎসক জানান, খালেদা জিয়াকে করোনারি কেয়ার ইউনিটকে (সিসিইউ) নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলেও তিনি সায় না দেওয়ায় নেওয়া হয়নি। তবে, সিসিইউর সব ব্যবস্থা কেবিনেই রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
ওই চিকিৎসক বলেন, ‘ম্যাডামের লিভারের সমস্যা জটিল হচ্ছে। এটার আসলে শতভাগ চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। বোর্ড সর্বোচ্চ চেষ্টা কর যাচ্ছেন। কিন্তু একাধিক জটিলতা থাকায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এজন্য তাকে বারবার মাল্টিপল ডিজিস সেন্টারে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রক্তের হিমোগ্লোবিন, প্রেশার ও ডায়বেটিসসহ স্বাস্থ্যের প্রায় সবকয়টি প্যারামিটারই ওঠানামা করছে। এটিবায়োটিক দিয়ে তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে। এ পর্যন্ত অনেকগুলো টেস্ট করা হয়েছে। বোর্ড কয়েকটির রেজাল্ট দেখে উদ্বিগ্ন। এজন্য তাকে আরও কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হবে।’
এদিকে, আজ সোমবার বিকেলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দলের চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর এভার কেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করেছে বলে জানানো হয়।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে আছে তার গৃহপরিচারিকা ফাতেমা আক্তার ও স্টাফ রূপা। আর মাসুদ নামে নিরাপত্তারক্ষী গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে হাসপাতালে খাবার নিয়ে যান।
এর আগে গত ১০ আগস্ট গুলশানের বাসা ফিরোজায় খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বেড়ে গেলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
৭৮ বছর বয়সি খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি ও লিভারের জটিলতা ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এর আগে গত ১২ জুন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে। তখন পাঁচ দিন তাকে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়েছিল।
২০২১ সালের এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে কয়েকবার নানা অসুস্থতার কারণে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
গত বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা। পরে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তার হৃৎপিণ্ডে স্টেন্ট বসানো হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ওই বছরের অক্টোবরে হাইকোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর।
এর পর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর। তিনি তখনো পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে ছিলেন।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদার দণ্ড স্থগিত করেন ছয় মাসের জন্য। ওই বছরের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর থেকে গুলশানে তার বাড়িতে রয়েছেন। এ পর্যন্ত ছয় দফায় তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।